
নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া এলাকায় হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর পরিকল্পিতভাবে সহিংস জনতা (মব) গঠনের চেষ্টা প্রশাসনের সময়োচিত হস্তক্ষেপে ব্যর্থ হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় স্থানীয় কিছু ধর্মব্যবসায়ী বনপাড়া বাজারে এক বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। তবে তারা ১০০ জনের বেশি লোক জড়ো করতে ব্যর্থ হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে উপস্থিত হলে অধিকাংশ লোকজন ঘটনাস্থল ত্যাগ করে, অল্প সংখ্যক লোক সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।
এর আগেই শুক্রবার হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ বড়াইগ্রাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) মাধ্যমে তাদের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচরে আনেন। বড়াইগ্রাম উপজেলা সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে দায়ের করা জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ইমাম কল্যাণ ঐক্য পরিষদ ও ওলামা-মাশায়েখগণ’ নামে একটি সংগঠন পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন মসজিদে উসকানিমূলক লিফলেট বিতরণ করে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। ওই লিফলেটে সংগঠনটিকে ‘ইহুদি-খ্রিষ্টানদের তৈরি কুফরী মতবাদ’ হিসেবে চিত্রিত করা হয় এবং তাদের সদস্যদের হত্যা বৈধ বলে উসকানি দেওয়া হয়।
জানা যায়, এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন ইমাম বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুতবার আগে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ মুসল্লিদের উত্তেজিত করে তুলছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাটোর জেলা কার্যালয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমকর্মীদের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, বড়াইগ্রাম এলাকায় একটি গোষ্ঠী হ্যান্ডবিল বিতরণ, মাইকিং ও অনলাইনে ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে হেযবুত তওহীদকে ইসলামবিরোধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা জানান, অতীতেও এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা ও ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এমনকি ৩০ বছরে ৫ শতাধিক বার তাদের ওপর হামলা হয়েছে, শত শত সদস্য আহত হয়েছেন এবং পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, হেযবুত তওহীদ কোরআন-হাদিস সম্মতভাবে সালাত আদায় করে, সুন্নাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং ইসলামের মূল শিক্ষার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কথিত ‘ইমাম কল্যাণ ঐক্য পরিষদ’-এর প্রচারিত হ্যান্ডবিলে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রমাণহীন বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এদিকে থানায় সাধারণ ডায়েরি ও সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে হেযবুত তওহীদের জেলা সভাপতি আব্দুস সবুর খান, আঞ্চলিক আমির আনিসুর রহমান সাকিব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
নাটোর জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি আব্দুস সবুর খান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তিনি দ্রুত উসকানিদাতাদের আইনের আওতায় এনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।