
নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের বড়াইগ্রামে অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন হেযবুত তওহীদকে নিয়ে বিদ্বেষমূলক হ্যান্ডবিল বিতরণ, মাইকিং, অপপ্রচার ও গুজব রটনার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মব সন্ত্রাস উসকে দেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৩ মে) রাত সাড়ে আটটায় উপজেলার বনপাড়ায় নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটির নাটোর জেলা শাখা।
সংবাদ সম্মেলনে হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত তিন দশক ধরে সংগঠনটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মেনে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরছে। কিন্তু একটি উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী হেযবুত তওহীদের উগ্রবাদবিরোধী অবস্থানকে সহ্য করতে না পেরে বারবার হামলা, অপপ্রচার ও হুমকির মাধ্যমে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি জেলার বড়াইগ্রাম এলাকায় একটি গোষ্ঠী হ্যান্ডবিল বিতরণ, মাইকিং ও অনলাইনে ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে হেযবুত তওহীদকে ইসলামবিরোধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা জানান, অতীতেও এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা ও ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এমনকি গত ৩০ বছরে ৫ শতাধিক বার তাদের ওপর হামলা হয়েছে, শত শত সদস্য আহত হয়েছেন এবং পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, হেযবুত তওহীদ কোরআন-হাদিস সম্মতভাবে সালাত আদায় করে, সুন্নাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং ইসলামের মূল শিক্ষার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কথিত ‘ইমাম কল্যাণ ঐক্য পরিষদ’-এর প্রচারিত হ্যান্ডবিলে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রমাণহীন বলেও তারা উল্লেখ করেন।
বক্তারা আরও বলেন, উগ্রবাদীদের ছাপানো হ্যান্ডবিলে হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে মিথ্যা, উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা হয়েছে। হ্যান্ডবিলটিতে দাবি করা হয়েছে- হেযবুত তওহীদ মহিলা ইমাম নিযুক্ত করে এবং মহিলাদের পেছনে পুরুষেরা নামাজ পড়ে। অথচ এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইতোমধ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বক্তারা জানান, যার উপর ভিত্তি করে এমন দাবি করা হচ্ছে, সেই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, বরং ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি ভিডিও।
তারা আরও বলেন, হ্যান্ডবিলে ইসলামের মৌলিক বিষয়- কালেমা বা তওহীদ সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ২০০৮ সালে সংগঠনের পক্ষ থেকে আল্লাহর মোজেজা হিসেবে উত্থাপিত একটি ঘটনার তুলনা ওহির সঙ্গে করা হয়েছে বলে হ্যান্ডবিলে দাবি করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিকৃত তথ্য।
তারা বলেন, নারী-পুরুষের মেলামেশা, নারীদের পর্দা, সালাত আদায়ের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে হেযবুত তওহীদের প্রকৃত বক্তব্য উপেক্ষা করে বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বক্তারা অভিযোগ করেন, হেযবুত তওহীদের বক্তব্য নয় এমন বিভিন্ন মনগড়া বিষয়ের মাধ্যমে জনগণকে সংগঠনটির বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, একজন মুসলমানের জন্য তওহীদের দাওয়াত দেওয়া ধর্মীয় দায়িত্ব এবং এটি বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। যারা এই অধিকার হরণ করতে চায়, তারা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের শত্রু।
সবশেষে কোনো গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য যাচাই করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সংবাদমাধ্যম, প্রশাসন এবং জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক দায়িত্বশীল আনিসুর রহমান সাকিব, নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ আব্দুস সবুর খান, সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুস সালাম, রাজনৈতিক যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ বাদশা প্রামাণিক ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এর আগে হেযবুত তওহীদ সদস্যদের উপর হামলা চালাতে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান, মিথ্যা অপপ্রচার চালানো এবং হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বড়াইগ্রাম থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মো. আবদুস সবুর খাঁন। অভিযোগপত্রে উল্লেখিতরা হলেন- রামাগাড়ি গ্রামের বনপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুর রহমান, কালিকাপুর ফজলিতলা বাইতুন নুর জামে মসজিদের ইমাম রেজাউল করিম খান, কালিকাপুর নতুন বাজার জামে মসজিদের ইমাম মো. ইয়ামিন হোসাইন, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম আবদুল হান্নান এবং হালদারপাড়া বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মো. মাহমুদুল্লাহ।