
নিজস্ব প্রতিনিধি:
কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণ ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে নোয়াখালী। গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রেকর্ড পরিমাণ ভারী বর্ষণ ও ফেনী মহুরিগঞ্জ নদীর পানি ধেয়ে আসায় বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে।
টানা ১০ দিনের রেকর্ড পরিমান ভারী বর্ষণ ও ফেনী মহুরিগঞ্জ নদী থেকে আসা বন্যার পানিতে জেলা শহর মাইজদী নোয়াখালীর পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ড চৌমুহনী পৌর সভার সব কটি ওয়ার্ডে এবং সোনাইমুড়ীর চাষীরহাট ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন এখন পানির নিচে। বন্যার পানিতে বসতঘর, সড়ক, বাজার, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে পানি বন্দি হয়ে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। মৎস্য খামারীদের খামার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর চাষীরহাটে দেখা গেছে, চাষীরহাট ইউনিয়র পরিষদ ও বাজার হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গলা সমান পানি। চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন মৎস্য প্রকল্পের একাধিক ঘেরের প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। চাষীরহাট শহীদী জামে মসজিদে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই হাঁটু-কোমড় সমান পানি উঠেছে। যাদের বসতবাড়ি একটু নিচু স্থানে তাদের বাড়ি পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে পানিতে আটকা পড়েছেন। উদ্ধার সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছেন। টানা বৃষ্টি আর বন্যার কারণে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকের ফোন বন্ধ। তারা সাহায্য চাইতে পারছেন না। শহরে থাকা স্বজনরা পরিবারের খোঁজ নিতে পারছেন না।
এছাড়া জেলার, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল সেনবাগ,কোম্পানীগঞ্জ,কবিরহাট,সুবর্ণচর উপজেলায় সকল রাস্তা রাস্তাঘাট বাড়ি ঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে গেছে। রান্না ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকে বসত ঘরে রান্না করতো । কিন্তু বসত ঘর ডুবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে রান্নার কাজ। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শতশত মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে, পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি।
বন্যা ও ভারি বর্ষণের কারনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এ দিকে দিন মজুর খেটে খাওয়া মানুষ গুলো কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কর্মহীন মানুষেরা সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন সরকার ও বিত্তশালীদের কাছে।
নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরো জানানো হয় লঘুচাপ ও মৌসুমী বায়ুর কারণে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি থাকতে পারে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার পানির কারণে পানি বেড়ে চলেছে। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সকল মাধ্যমিক, প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে।