
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় সচেতন মহল তার অপসারণ ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর বিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১২ দফা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কোনো আভ্যন্তরীণ আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হয়নি।
অভিযোগকারীদের মধ্যে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহজালাল সাজু, সহকারী শিক্ষক মেহের এলাহী, এবং জাহাঙ্গীর হারুনসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। অভিযোগটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রমিজ আলম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) গ্রহণ করেন। তবে, ইউএনও রিসিভ কপি প্রদান না করায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়রা জানায় , মফিজুল হক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে জমি কেনা, পাঁচতলা ভবন নির্মাণ এবং কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পূর্ববর্তী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি ইমদাদুল হকের ছত্রছায়ায় তিনি এ অনিয়ম চালিয়ে আসছিলেন। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর, ৫ আগস্ট ইউএনও রমিজ আলম বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পর থেকেই ছাত্র-জনতা প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন এবং অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এক ছাত্র জানান, “আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত। আমরা তার বরখাস্ত এবং দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।” একজন অভিভাবক বলেন, “প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের সঠিক হিসাব নেওয়া এবং আইনের আওতায় আনা হোক।”
এদিকে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও স্থানীয় সাংবাদিকরা বিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরও ইউএনও কোনো স্পষ্ট জবাব দেননি।
একাধিক অভিযোগ সত্ত্বেও এতদিন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রধান শিক্ষক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহল নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির সুষ্ঠু বিচার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। মফিজুল হক ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন স্থানীয়রা।