Date: October 17, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / বন্ধু না এলে কবুল নয়! নোয়াখালীর বিয়েতে অবিশ্বাস্য কাণ্ড - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

বন্ধু না এলে কবুল নয়! নোয়াখালীর বিয়েতে অবিশ্বাস্য কাণ্ড

October 15, 2025 08:55:38 AM   দেশজুড়ে ডেস্ক
বন্ধু না এলে কবুল নয়! নোয়াখালীর বিয়েতে অবিশ্বাস্য কাণ্ড

নোয়াখালীর হাতিয়ায় ঘটে গেছে এক বিরল ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। বিয়ের দিন কনের বাড়ি সাজানো, রান্নাবান্না চলছে পুরোদমে, অতিথিদের ভিড়ে মুখরিত পরিবেশ। সব প্রস্তুতি শেষ, বরযাত্রীও পৌঁছে গেছে। কিন্তু কাজির সামনে বসেও বর কবুল বলছেন না! কারণ—তার প্রিয় বন্ধু এখনো বিয়েতে আসেননি। বন্ধুকে ছাড়া জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে ‘কবুল’ বলবেন না তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে এমন ঘটনাই ঘটেছে হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামে। পরে পুরো ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

কনেপক্ষের আত্মীয় আলতাফ হোসেন বলেন, “দুপুর ১২টা থেকেই আমরা অতিথিদের খাওয়ানো শুরু করি। বর আসে দেড়টার দিকে। কিন্তু বরের এক বন্ধুর জন্য প্রায় দুই ঘণ্টা আমরা অপেক্ষা করি। বর কবুল বলতে রাজি নয়। অনেক অতিথি বিরক্ত হয়ে চলে যান। শেষে বন্ধুটি আসার পরই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।”

স্থানীয় সূত্র জানায়, হাতিয়ার সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের করিম বেপারির ছেলে আরমান হোসেনের বিয়ে ঠিক হয় তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামে। বরযাত্রী রওনা হওয়ার সময় গাড়িতে বসা নিয়ে বরের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বন্ধু বিয়েতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কনের বাড়িতে পৌঁছে বর যখন বন্ধুকে দেখতে পাননি, তখনই তিনি গাড়ি থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানান।

পরিবার, আত্মীয়স্বজন, এমনকি গ্রামবাসীও অনেক বুঝিয়ে বলেও তাকে রাজি করাতে পারেননি। বর সাফ জানিয়ে দেন—“বন্ধু না এলে কবুল বলব না।” এরপর বিয়ের কাজ স্থগিত থাকে প্রায় দুই ঘণ্টা। অবশেষে বরপক্ষের কয়েকজন গিয়ে বন্ধুটিকে নিয়ে আসে, তার উপস্থিতিতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান রানা বলেন, “আজ এক আশ্চর্য বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত দেখলাম। বন্ধুর অনুপস্থিতিতে বর কবুল বলল না—এমন ঘটনা জীবনে প্রথম দেখছি। সত্যি বলতে, এমন বন্ধুত্ব আজকাল খুবই বিরল।”

কনের মামা সেলিম হোসেনের ভাষায়, “আমরা সবাই বসে আছি, কাজি সাহেবও প্রস্তুত। কিন্তু বর চুপচাপ। পরে শুনি, বন্ধু না আসায় সে কবুল বলছে না। শেষমেশ বন্ধুটি আসতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। এমন ঘটনা কোনো সিনেমাতেও দেখিনি।”

অবশেষে মুখ খুলেছেন বর আরমান হোসেনও। তিনি বলেন, “রিয়াজ আমার ছোটবেলার বন্ধু। গাড়িতে বসা নিয়ে রাগ করে সে বিয়েতে আসেনি। আমি জীবনের এই শুভ দিনে তাকে ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। তাই ও আসার পরই আমি কবুল বলেছি।”

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় এখনো চলছে আলোচনা। অনেকেই বলছেন, আধুনিক যুগে এমন অকৃত্রিম বন্ধুত্ব দেখা যায় না—যে বন্ধুর জন্য বর নিজের বিয়েও থামিয়ে রাখতে পারে।