Date: June 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ময়মনসিংহ / ‘বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার আহ্বান’ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

‘বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার আহ্বান’

May 24, 2025 11:20:21 PM   অনলাইন ডেস্ক
‘বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার আহ্বান’

শাহাদৎ হোসেন:
ময়মনসিংহে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক কর্মী সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে জেলা হেযবুত তওহীদের আয়োজনে তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে এদিন সকাল ৮টা থেকে সম্মেলনস্থলে আসতে থাকেন হেযবুত তওহীদের ময়মনসিংহের নেতাকর্মীরা। এসময় হাজারো নেতাকর্মীদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন হেযবুত তওহীদের শীর্ষ নেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাপতি এনামুল হক বাপ্পার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি বাচ্চু মিয়া, বিভাগীয় নারী সম্পাদক রোজিনা আক্তার, জেলা নারী সম্পাদক কাজল আক্তার প্রমুখ।
হেযবুত তওহীদের এমাম তার বক্তব্যে বলেন, “দেশের সামাজিক ও নৈতিক অবস্থা দিন দিন অবনতি ঘটছে। চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, মিথ্যা মামলা, দুর্নীতি ও বিচার ব্যবস্থার স্থবিরতা বেড়েই চলেছে। অথচ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের বহর বেড়েছে, কিন্তু সৎ চরিত্রের বিকাশ ঘটেনি। এতে বোঝা যায়, সমস্যাটা ধর্মীয় আচরণের ভেতরে নয়, বরং তার যথাযথ প্রয়োগ না থাকার মধ্যে নিহিত।”

WhatsApp Image 2025-05-24 at 3.52.30 PM (2)
তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ মানুষকে যেমন সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তাদের জন্য দিয়েছেন একটি নির্ভুল জীবনব্যবস্থা ‘দীনুল হক’। সেই সঠিক ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর ফলে সমাজে অশান্তি ও অবিচার বেড়েছে।  মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সেই মানবজীবনও একটি গাইডলাইন ছাড়া চলে না, আর সেই গাইডলাইন হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া সিস্টেম। আজকের তথাকথিত সভ্যতা এই সত্য অস্বীকার করে বিপদ ডেকে আনছে।”

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “আমরা যখন আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনা বাদ দিয়েছি, তখনই আমাদের জীবনে দুর্দশা নেমে এসেছে। রাষ্ট্রীয় জীবনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় আজ চুরি, ডাকাতি, খুন, যুদ্ধ, হানাহানি চলছে। তাহলে প্রশ্ন আসে আমরা কি আল্লাহকে বিশ্বাস করা ছেড়ে দিয়েছি? বিষয়টা তা নয়। আমরা ব্যক্তি জীবনে আল্লাহকে মানি, কিন্তু রাষ্ট্রীয় জীবনে মানুষের তৈরি বিধান দিয়ে দেশ পরিচালনা করছি।”

WhatsApp Image 2025-05-24 at 3.52.30 PM
তিনি বলেন, “অনেকে মনে করছেন, আগামী নির্বাচন সব সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে। আমি হলফ করে বলতে পারি- যতই ফেয়ার অ্যান্ড ফ্রি নির্বাচন হোক না কেন, এই ব্যবস্থা পরিবর্তন না করলে দেশে শান্তি আসবে না। বর্তমান তাগুতি সভ্যতার তৈরি এই সিস্টেমই মূল সমস্যা। এই ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে কোনো বিপ্লব, কোনো দলগত পরিবর্তনই টেকসই হবে না।”

বিশ্বপরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শুধু বাংলাদেশ নয় আজকের বিশ্ব এক ভয়াবহ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় বিভাজন, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক লোভের দ্বন্দ্বে মানবজাতি ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাতের কালো মেঘ দিনে দিনে ঘনিয়ে আসছে। মায়ানমারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ভারত-পাকিস্তানের টানাপোড়েন এবং বাংলাদেশকে ঘিরে বহুমুখী ষড়যন্ত্র -এসবই প্রমাণ করে, পুরো অঞ্চল ভয়ংকর অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।”

WhatsApp Image 2025-05-24 at 3.52.31 PM
তিনি আরও বলেন, “যেখানে মানবতা রক্ষা পাওয়ার কথা, সেখানে চলেছে বর্বরতা। গাজায় আজ শিশুরা ক্ষুধায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে, নিরস্ত্র মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আশি বছর ধরে ফিলিস্তিনে এক নিষ্ঠুর গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। রাখাইন রাজ্যেও একই নির্মমতা, যেখানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমানকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এসব নৃশংসতার মূল কারণ একটিই- মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের চরম অভাব।”

তিনি বলেন, “৫৫টি রাষ্ট্রে বিভক্ত মুসলিম জাতি আজ পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। প্রতিটি রাষ্ট্র কেবল নিজেদের সীমানা আর স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত। তাই ফিলিস্তিন হোক কিংবা রাখাইন, কাশ্মীর হোক কিংবা চেচনিয়া- কোথাও মুসলমানদের রক্ত ঝরলেও বিশ্ব মুসলিমের পক্ষ থেকে দৃঢ় কোনো জবাব আসে না।”

তিনি বলেন, “তোমরা আজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। সারা দুনিয়ায় সংঘর্ষ বেড়ে চলেছে, আর কেউ তা থামাতে পারছে না। কারণ, তোমরা আল্লাহর খেলাফত ছেড়ে ইবলিসের খেলাফতের শরণ নিয়েছো। এই ধ্বংসের দিক থেকে ফিরে আসতে হলে একমাত্র পথ হলো- আবার আল্লাহর খেলাফতের দিকে ফিরে যাওয়া। ঘোষনা করো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানব না। তবেই তোমরা মুক্তি পাবে এ বিশ্বব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ থেকে।”

বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই দেশও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে গাজার মতো অবস্থা হতে পারে। এই বিপর্যয় এড়াতে হলে ফেরকা ও দলাদলি থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর বিধানের ওপর ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর দেওয়া ব্যবস্থার দিকেই ফিরতে হবে। এই একমাত্র আদর্শিক নেতৃত্বই দেশ ও জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দিনব্যাপী এ আয়োজনে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মী, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।