
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
২০১৬ সালের ১৪ মার্চ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে মির্জাপুর উপজেলার হেযবুত তওহীদ। বৃহস্পতিবার সকালে মির্জাপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের মির্জাপুর উপজেলা বাণিজ্য সম্পাদক মো. তারেক সিদ্দিকির সঞ্চালনায় মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি হাবিবুর রহমান। মূল আলোচনা পেশ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী স্বাস্থ্য বিষয় সম্পাদক মো. নাজমুল হোসেন ও টাঙ্গাইল জেলা হেযবুত তওহীদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর সভাপতি মোঃ জয়নাল আবেদিন।
কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী স্বাস্থ্য বিষয় সম্পাদক মো. নাজমুল হোসেন তার বক্তব্য বলেন, ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বাসায় একটি মসজিদ নির্মাণ করার সময় হেযবুত তওহীদের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রম দিতে যায়। এসময় ধর্ম ব্যবসায়ী, উগ্রবাদী গোষ্ঠী মসজিদের মাইক ব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়ে দেন ঐখানে মসজিদ নয়, গির্জা নির্মাণ হচ্ছে। উগ্রবাদীদের উস্কানিতে তাদের অনুসারীরা পৈশাচিক আক্রমণ চালিয়ে আমাদের দুই জন্য ভাই শহিদ ইবরাহিম রুবেল ও শহিদ সোলায়মান খোকনের হাত পায়ের রগ কেটে, চোখ উপরে ফেলে। আল্লাহ আকবর বলে গরু জবাই করার ছুরি দিয়ে এই নির্মম ও পৈশাচিক হত্যাকান্ড চালায় সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও উগ্রবাদীরা হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় আরও অসংখ্যা ভাই-বোন আহত হন। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোন বিচার আমরা পাইনি, সরকার পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বার বার গিয়েও আমরা তেমন কোন বিচার পাচ্ছি না, আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
মানববন্ধন থেকে গণমাধ্যমের সামনে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও প্রকাশ্য দিবালোকে দুইজনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল ও পরোক্ষভাবে যারা ইন্ধন যুগিয়েছিল তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনাসহ ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য মোঃ ওমর খান, গাজীপুর মহানগর এর সভাপতি শহিদুল ইসলাম, কালিয়াকৈর এর সভাপতি ইয়াকুব আলী, সখিপুর উপজেলার সভাপতি মোঃ ইউনুস খান, মির্জাপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক হোসেন, মির্জাপুর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, রাজনৈতিক সম্পাদক রহিম মিয়া, প্রচার সম্পাদক আল-আমীন মিয়া, মির্জাপুর উপজেলার সভাপতি মো হূমায়ন কবির প্রমুখ।
হেযবুত তওহীদের দাবিগুলো হলো- (১) ২০১৬ সালের ১৪ই মার্চে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাটের পোরকরা গ্রামে মিথ্যা গুজব রটিয়ে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও প্রকাশ্য দিবালোকে দুইজনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল ও পরোক্ষভাবে যারা ইন্ধন যুগিয়েছিল তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। (২) হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, গ্রেফতারও করা হয়নি, কিন্তু এখন তাদের নাম, ঠিকানা ও হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই হামলাকারীদেরকেও দ্রুত গ্রেফতার করে সম্পূরক অভিযোগপত্রের মাধ্যমে বা যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। (৩) উগ্রবাদী সন্ত্রাসী ও ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী আবারও মিথ্যা হ্যান্ডবিল রচনা করে বিভিন্ন মসজিদে, মাদ্রাসায়, রাস্তাঘাটে, দোকানে বিতরণ করছে এবং যেটা আমরা বলিনি, করিনি, যেটা আমাদের আকিদা নয়, বিশ্বাস নয়, সেগুলোকে আমাদের উপর আরোপ করছে। তারা চাচ্ছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে। এসব মিথ্যা হ্যান্ডবিল বাজেয়াপ্ত করে এহেন অপপ্রচারের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। (৪) সোনাইমুড়িতে বর্তমানে আমরা অন্তত ৪২ টি উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে তুলেছি। সেই উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে থাকা স্থাপনাগুলো যেমন- স্কুল, মসজিদ, মক্তব, গবাদি পশুর খামার, মৎস্য খামার, বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা, কুটির শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত সদস্য-সদস্যাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। (৫) সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে চাষীরহাট ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে ওয়াজ মাহফিলের নামে সভা-সমাবেশ করে উগ্রবাদী বক্তাদের ভাড়া করে এনে হেযবুত তওহীদের এমামের নাম ধরে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে হামলা করার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করে উগ্রবাদী বক্তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাছাড়াও যে সমস্ত তাত্ত্বিক গুরু বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী ব্যবহার করে ওয়াজের নামে সারাদেশে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, গুজব রটাচ্ছে ও হামলার উসকানি দিচ্ছে, তাদেরকে সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (৬) ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি, মাদক, হুজুগ, গুজব, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে সারাদেশে হেযবুত তওহীদ যে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেই অনুষ্ঠানগুলোর যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। (৭) ফেসবুক, ইউটিউবসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়াতে আসল অথবা ফেক আইডি ব্যবহার করে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মিথ্যা অপপ্রচারমূলক কন্টেন্ট, হত্যার হুমকি, গুজব রটনা, মিথ্যা ফতোয়া প্রদানের মাধ্যমে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে তাদের পরিচয় ও অবস্থান চিহ্নিত করে আইসিটি আইনের আওতায় আনতে হবে। সামনে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল।