
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন নজরকাড়া রঙে রাঙানো। দেওয়ালে আঁকা হয়েছে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা, জাতীয় বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি ও শিক্ষণীয় নানা চিত্র। শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক পরিবেশ। স্কুলগুলো এখন শুধুমাত্র শিক্ষার জায়গা নয়, রঙিন চিত্র আর নীতিকথার পাঠশালা হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহর ও গ্রামের প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজি বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, গ্রামীণ জীবনধারা, শহীদ মিনার, বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ও শিক্ষণীয় ছন্দ আঁকা হয়েছে। ‘আমাদের স্কুল আনন্দের এক রঙিন ফুল’, ‘স্বপ্ন দেখতে শেখো কারণ স্বপ্ন না দেখলে সফল হওয়া যায় না’—এমন সব চিত্র ও বার্তা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছে। বিদ্যালয়গুলো সজ্জিত হওয়ায় পথচারীরাও দৃষ্টি ফেরাতে বাধ্য হচ্ছেন।
সৈয়দপুর উপজেলার একটি পৌরসভা এবং পাঁচটি ইউনিয়নে এই ৭৮টি বিদ্যালয় অবস্থিত। এগুলো তিনটি ক্লাস্টারে বিভক্ত—কামারপুকুর, রামকৃষ্ণ ও পূর্ব বোতলাগাড়ি। প্রতিটি বিদ্যালয় আলাদা বৈশিষ্ট্যে সজ্জিত হওয়ায় সহজেই অন্য উপজেলা থেকে আলাদা করা যায়।
বিদ্যালয়ের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, দেয়ালে আঁকা চিত্র ও লেখাগুলো তাদের বেশ ভালো লাগে। এগুলো দেখলে তারা পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হয় এবং বড় হয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখে।
বানিয়াপাড়া আজিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম. ওমর ফারুক বলেন, “বিদ্যালয়গুলোর নতুন রূপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহের জন্ম দিয়েছে। তারা এখন নিয়মিত স্কুলে আসছে। বিদ্যালয়গুলোতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের মাধ্যমে তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটছে।”
রংপুর বিভাগে শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি সুলতানা জানান, “শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমেছে। বিভিন্ন স্কুলে ছাদ বাগান, ফেসবুক পেজ চালু এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির একান্ত চেষ্টায় এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।”
কামারপুকুর ক্লাস্টারের তদারকি কর্মকর্তা মরিয়ম নেসা বলেন, “প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলো আমার আবেগের জায়গা, আর এই ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা আমার ভালোবাসা। তারা ইতোমধ্যে দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ করছে, যা তাদের সৃজনশীল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করছে।”
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন সরকার বলেন, “বিদ্যালয়গুলোর এই পরিবর্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। আমরা তিনটি ক্লাস্টারে কাজ ভাগ করে সফলতার সাথে এগিয়ে চলেছি। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং সৃজনশীল কর্মসূচি চালু করেছি। এ বছর আমাকে রংপুর বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে, যা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা আরও বাড়িয়েছে।”
তিনি আরও জানান, সৈয়দপুর উপজেলায় পঠন দক্ষতা বৃদ্ধিসহ আরও অনেক উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে সৈয়দপুর উপজেলা সারা দেশে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হবে বলে তিনি আশাবাদী।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই নান্দনিক উদ্যোগ শুধু শিক্ষার পরিবেশকেই উন্নত করেনি, বরং শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীলতা এবং পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে সৈয়দপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।