Date: May 12, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / আখ ক্ষেতে ধানচাষ: কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লবী পরিবর্তনের আশা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

আখ ক্ষেতে ধানচাষ: কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লবী পরিবর্তনের আশা

May 11, 2025 09:16:32 PM   অনলাইন ডেস্ক
আখ ক্ষেতে ধানচাষ: কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লবী পরিবর্তনের আশা

পাবনায় আখ ক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে ধানের চাষ। এই পদ্ধতিতে অল্প পানিতে আখের সঙ্গে ধান চাষ করা সম্ভব হবে। আখের খরচ দিয়েই ধানের দুই-তৃতীয়াংশ খরচ মেটানো যাবে। এতে এক-তৃতীয়াংশ খরচ কমে লাভবান হবেন কৃষক। এছাড়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আখ উৎপাদনে চিনিকলের কাঁচামাল সংকটও দূর হবে।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই)-এর বিজ্ঞানীরা ধানের সঙ্গে আখ চাষের এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, এ পদ্ধতিতে ধান চাষের সেচ ও জ্বালানি খরচ প্রচলিত পদ্ধতির এক চতুর্থাংশ। জমির বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষক লাভবান হবেন। নতুন এই প্রযুক্তি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের আখ জোন এলাকায় এক লাখ হেক্টর জমিতে বছরে অতিরিক্ত ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন সম্ভব করবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আখ চাষে সাধারণত এক বছর সময় লাগে। দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল এ ফসল চাষে লোকসান হওয়ায় গত এক দশকে পাবনাসহ আশেপাশের জেলায় আখের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে কাঁচামালের অভাবে উত্তরবঙ্গের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হিমশিম খায়। এই সংকট মোকাবেলায় আখ চাষকে লাভজনক করে কৃষককে আগ্রহী করতে সাথি ফসল হিসেবে ধান চাষের পরিকল্পনা করা হয় বিএসআরআই-এর বিজ্ঞানীদের দ্বারা। এর আওতায় ঈশ্বরদীর মুলাডুলি কৃষি ফার্মসহ কয়েকটি জায়গায় গত তিন বছরে ধারাবাহিক চেষ্টায় সফলতা আসার পর বর্তমানে খুঁটিনাটি পরীক্ষা চলছে। গবেষকরা আশা করছেন, সীমাবদ্ধতা দূর করে দ্রুতই কৃষক পর্যায়ে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

বিএসআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামস তাবরিজ জানান, সাধারণত উত্তরাঞ্চলে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি লাগে। তবে আখ খরাসহিষ্ণু ফসল হওয়ায় ধান ও আখের যৌথ চাষে পানি সাশ্রয় হয় এবং সেচ ও জ্বালানি খরচ কমে। একই সঙ্গে ধানের জন্য প্রয়োগ করা সার আখেরও কাজে লাগে, যার ফলে কৃষক সার্বিকভাবে ভালো মুনাফা অর্জন করবেন।

বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং আখ ও ধানের যৌথ চাষ পদ্ধতির প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, এ পদ্ধতিতে কৃষকের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমবে। আখ চাষে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষক শুধুমাত্র আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছিলেন না, তাই খরচ কমিয়ে অর্থনৈতিক লাভের উপায় খুঁজছিলেন। আখ ও ধানের যৌথ চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন। বর্তমানে চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে, এবং খুব শীঘ্রই এটি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে।

তিনি আরো জানান, বেড পদ্ধতি ও সরাসরি আবাদ, এই দুইভাবেই আখ ও ধানের যৌথ চাষ করা সম্ভব। এতে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় ভূগর্ভস্থ পানি প্রয়োজন হবে না, ফলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ কমবে। নতুন প্রযুক্তির এই চাষাবাদ পদ্ধতি সম্প্রসারিত হলে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারে কৃষি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, আখ একটি অর্থকরী ফসল। ধান ও আখের যৌথ চাষ নিঃসন্দেহে চাষীদের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। তবে সঠিক সময়ে রোপণ ও পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে কৃষক আবাদ করলে লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমদ বলেন, যেহেতু ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল, তাই আখ ক্ষেতে ধানের চাষ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে। এতে একই খরচে কৃষক বাড়তি ফসল পাবেন এবং কৃষি অর্থনীতি নতুন দিশা পাবে।