
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো হোগলাপাতার বন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে হোগলাপাতার উপর নির্ভরশীল কর্মসংস্থানে ধস নেমেছে।
বরগুনার আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকাগুলিতে হোগলাপাতা দিয়ে মাদুর, নামাজের পাটি, হাতপাখা, দড়ি তৈরি করে বিক্রি করা হতো, যা ছিলো স্থানীয়দের একমাত্র আয়ের উৎস। তুলনামূলকভাবে এসব সামগ্রীর খরচ কম হওয়ায় সেগুলো স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে পেশা পরিবর্তন এবং বাজার মূল্য হ্রাসের কারণে এই শিল্প থেকে অনেকেই সরে এসেছেন।
হোগলাপাতার সাথে জড়িত আমতলী উপজেলার বারেক প্যাদা জানান, জমি ও খালের হোগলাপাতা কেটে প্রভাবশালীরা সেসব জায়গা দখল করে মাছের ঘের, বাড়িঘর নির্মাণ করছেন, ফলে আগের মতো আর হোগলাপাতা পাওয়া যায় না। যেটুকু পাওয়া যায় তা বেশি দামে কিনতে হয়, তবে খরচ অনুযায়ী বিক্রির উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় না, ফলে অনেকেই লোকসানের শিকার হন।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, হোগলাপাতা আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে এটেঁল মাটিতে জন্মে, যা জলাবদ্ধ স্থানে বিশেষত নদী, খাল এবং ঝিলের পাড়ে বেশি দেখা যায়। লম্বায় প্রায় ৫ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত হয়, যা সবুজ পরিবেশ তৈরি করে। এই উদ্ভিদের ফুল থেকে তৈরি হয় স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘হোগল গুড়া’, যা পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের কৃষক সত্তার গাজী বলেন, এক যুগ আগেও গ্রামের ঘরে ঘরে হোগলার কাজকর্ম চলতো। বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় হোগলা পাতার হাতপাখা ছিলো নিত্য দিনের সঙ্গী। বর্তমানে প্লাস্টিকের মাদুর ও পাখা সেই স্থান দখল করে নিয়েছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ঈসা জানান, হোগলাপাতার কৃষি ও অর্থনৈতিক চাহিদা রয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে এর চাষাবাদ করা গেলে এটি কৃষি উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।