
পাংশা সংবাদদাতা, রাজবাড়ী:
রাজবাড়ীর পাংশায় নেশার টাকা যোগান দিতে তিন বছরের কণ্যা সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। প্রবাস থেকে ফিরে এমন অভিযোগ করেন স্ত্রী। তবে অভিযোগ অশ্বিকার করে, স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন স্বামী।
রাজবাড়ী জেলার পাংশা পৌরসভাধীন বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রবাসী সুকজান বেগম (৪০) এর গত ২০ বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের জাগলবা এলাকার মৃত গফুর আলীর ছেলে আব্দুল কাদের শেখের সাথে। ২০ বছরের সংসার জীবনে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক তারা।
সুকজান বেগম জানান, স্বামী আব্দুল কাদের কোন কাজ-কাম করতেন না। স্বামী ও তিন সন্তানের সংসারে অভাব অনোটন মেটাতে পরের বাড়িতে কাজ করতেন তিনি। তার স্বামী নেশা করেতেন এবং তাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতেন। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তিন বছরের কণ্যা সুমাইয়াকে নিয়ে ২০১৯ সালের দিকে বাবার বাড়ি চলে আসেন। সুমাইয়াকে তার মা রহিমা বেগম (সুমাইয়ার নানী) কাছে রেখে বিদেশ যান। বিদেশ যাওয়ার দুই-তিন মাস পর তার স্বামী কাদের তার মায়ের কাছ থেকে সুমাইয়াকে নিয়ে যায়। সুমাইয়াকে নিয়ে যাওয়ার তিন-চার মাস পর তার স্বামী তাকে জানায় সুমাইয়া হারিয়ে গেছে। দুই বছর প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে মেয়ে সুমাইয়ার সন্ধান পান তিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী নেশার টাকা যোগান দিতে আমার মেয়ে সুমাইয়াকে বিক্রি করে দিয়েছে এবং আমাকে বলেছে সুমাইয়া হারিয়ে গেছে। আমি অনেক খোজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি আমার মেয়ে সুমাইয়াকে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের গটকা গ্রামের মৃত মকছেদ মন্ডলের ছেলে মমিন মন্ডলের কছে বিক্রি করেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও মেয়েকে ফিরে পাচ্ছি না। তিনি মেয়েকে ফিরে পেতে প্রশাসনের দারস্ত হবেন বলে জানান।
সরেজমিনে গিয়ে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের শেখের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ এনেছেন তা সম্পুর্ণ মিথ্যা।
তিনি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অভাব-অনটনের সংসার। আমার স্ত্রী এই সংসারে থাকবে না বলে তিন-চার বছর আগে তিন সন্তানকে রেখে আমার বাড়ি থেকে চলে যায়। আমার ছোট মেয়ে সুমাইয়ার বয়স তখন তিন বছর। আমি আমার মেয়েকে তখন লালন-পালন না করতে পারায় আমি সিদ্ধান্ত নেই সুমাইয়াকে এতিমখানায় দিয়ে দেব। এমন সময় আমার এক প্রতিবেশী মর্জিনা বেগমের ভাই মমিন মন্ডল আমার মেয়েকে লালন-পালন করার দায়িক্ত নিতে ইচ্ছা প্রশন করে। মমিন মন্ডল কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া ইউনিয়নের গটকা গ্রামের মৃত মকছেদ মন্ডলের ছেলে। তার তিনটি ছেলে সন্তার রয়েছে। মেয়ে সন্তান না থাকায় সে আমার মেয়েকে নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করার জন্য বুঝে নেয়। মেয়েকে বুঝে দেওয়ার সময় আমাদের এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোসলেম আলী বিশ্বাস সহ এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ইউপি সদস্য মোসলেম আলী বিশ্বাস বলেন, সুমাইয়াকে বিক্রি করা হয়নি। সে তার মেয়েকে ইচ্ছকৃত ভাবে মমিনের কাছে দিয়েছে। সে তার মেয়েকে বিক্রি করেনি।
শিশু কন্যাকে বুঝে নেওয়া মমিন মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার তিন ছেলে সন্তান। মেয়ে সন্তান না থাকায় সুমাইয়াকে নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করার জন্য এনেছি। এখন পর্যন্ত সুমাইয়া আমার মেয়ে হিসেবেই আমর বাড়িতে রয়েছে। এই মেয়েকে আনার সময় মেয়ের প্রকৃত পিতা আব্দুল কাদের সহ তার এলাকার অনেকেই উপস্থিত ছিলো। তবে এই মেয়েকে তিনি কিনে নেননি বলে জানান।