শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধে গ্রাম্য সালিশে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই বছর বয়সী এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় নিহত শিশুর মা-বাবাসহ পরিবারের চারজন গুরুতর আহত হয়েছে। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে
প্রতিপক্ষের মারধরের সময় শিশুর মা-বাবা আত্নরক্ষার্থে বসতঘরের ভেতর প্রবেশ করার সময় প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতারি বেদম পিটাতে থাকে। মারধরের এক পর্যায়ে মায়ের কোলে থাকা দুই বছরের শিশু ফাতেহা খাতুনের মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর আহত হয়। মুমূর্ষ অবস্থায় শ্রীপুর হাসপাতালে নিয়ে যাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
নিহত শিশু ফাতেহা খাতুন (২) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের মেয়ে।
আহতরা হলেন,নিহত শিশুর মা কুলসুম (২২), বাবা ছাত্তার (৩৬), চাচা মোক্তার হোসেন(২৭), চাচী ইতি আক্তার (২০)।
অভিযুক্তরা হলেন, একই গ্রামের ফরহাদ (৩২), আব্দুর রশিদ (৫০), হুমায়ুন (৩০), খোরশেদ (৪৫), জাকির হোসেন (২০), আকাশ (২০), মেহেদী হাসান (১৮), ইসলাম উদ্দিন (৭০), লাল মিয়া (৭৫), তুতু মিয়া (৪৫)।
নিহতের চাচা মোক্তার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী লাল মিয়ার সঙ্গে আমাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিলো। কিছুদিন পূর্বে প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দাখিল করে। এর ধারাবাহিকতায় ইউপি চেয়ারম্যান কয়েকজন ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দিলে গ্রাম্য সালিশ বসে। সালিশ শুরুরএক পর্যায়ে জমির কাগজপত্র দেখা শুরু করে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আমাদের বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন দা লাঠি এনে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
এসময় নিহত শিশুর মা-বাবাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করলে তারা আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে বসতঘরে আশ্রয় নিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ির আঙিনায় ফেলে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। এসময় মায়ের কোলে থাকা ছোট্ট শিশুটি মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ভাই ভাবিসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তিনি আরও জানান, গ্রাম আওয়ামীগের সভাপতি ফালুন মৃধা আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করে। প্রতিপক্ষের লোকজন আমার গর্ভবতী স্ত্রী ইতি আক্তারের পেটে লাথি দিয়ে গুরুতর আহত করে।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সামাদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে দাখিল করার বিষয়ে গ্রাম্য সালিশ বসে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছিল। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠলে আমরা উভয় পক্ষকে থামিয়ে দেই। এর কিছুক্ষণ পরই লাল মিয়ার নেতৃত্বে দা লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে।
একপর্যায়ে বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে মারধরের সময় শিশুর মাথায় আঘাতপ্রপ্ত হয়। এরপর শিশুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সাবিনা আক্তার বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যায়। মারা যাওয়ার পরপরই পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এ এফ এম নাসিম জানান, খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পুলিশের কয়েকটি টিম পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।