Date: May 10, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ময়মনসিংহ / জামালপুরে দারকী শিল্প বিলুপ্তির পথে, সহায়তার দাবি কারিগরদের - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

জামালপুরে দারকী শিল্প বিলুপ্তির পথে, সহায়তার দাবি কারিগরদের

May 10, 2025 06:29:36 PM   অনলাইন ডেস্ক
জামালপুরে দারকী শিল্প বিলুপ্তির পথে, সহায়তার দাবি কারিগরদের

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দারকী শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি মাছ ধরার এই ফাঁদ এক সময় গ্রামবাংলার মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপকরণ ছিল। তবে বর্তমানে উপকরণের চড়া দাম, নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যাপক ব্যবহার এবং চাহিদার অভাবে এই শিল্প মারাত্মক সংকটে পড়েছে।

দারকী তৈরির কারিগররা জানান, এক জোড়া দারকী বানাতে সময় লাগে এক থেকে দুই দিন। এতে খরচ হয় প্রায় দেড় থেকে দুই শত টাকা। তবে আকার, নকশা ও গুণগত মান অনুযায়ী এসব দারকী পাঁচ থেকে সাত শত টাকায় বিক্রি করা যায়। আগে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো এই দারকী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাঁশ ও বেতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, নদী-নালা-খালে অবাধে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার দারকীর প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে অনেক কারিগর বাধ্য হয়ে কম দামে পণ্যটি বিক্রি করতে হচ্ছে, যা তাদের জীবিকা কঠিন করে তুলেছে।

মেলান্দহ উপজেলার ছনকান্দা গ্রামের অভিজ্ঞ কারিগর নুরুল হক বলেন, ‘আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দারকী বানানোর কাজ চলত। এখন অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। বাঁশ-বেতের দাম বাড়ায় খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সাথে কারেন্ট জালের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে দারকীর চাহিদা অনেক কমে গেছে। আমরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না, তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।’

দারকী নির্মাণের পেছনে শ্রম, সময় এবং দক্ষতা প্রয়োজন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কারিগররা প্রাপ্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই সংকট থেকে বের হতে না পারলে আগামী প্রজন্মের কাছে এই শিল্প হয়তো শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে।

এদিকে, মেলান্দহ উপজেলার নির্বাহী অফিসার এস.এম আলমগীর বলেন, ‘মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে অভিযান চলমান রয়েছে। অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, দারকী বুননশিল্পের কারিগরদের সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’

কারিগরদের দাবি, দারকী শুধু একটি মাছ ধরার ফাঁদ নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, একটি ঐতিহ্যের প্রতীক। তাই এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা গেলে হয়তো এই হারিয়ে যেতে বসা শিল্প আবারও নতুন করে প্রাণ ফিরে পেতে পারে।