
সরিষাবাড়ী সংবাদদাতা:
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে টিউবওয়েলের পানি খেয়ে অন্তত ২১ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার একাডেমিতে রাত সাড়ে সাতটায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রবিবার রাতে ১০ জন ও সোমবার সকালে ৪ জনকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় সরিষাবাড়ী হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ৫ জনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল, ২ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ১ জনকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। তবে টিউবওয়েলের পানিতে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়েছে কিনা তদন্তের মাধ্যমে খোজ নেওয়ার দাবী জনান স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের দাবী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইল্ড কেয়ার একাডেমি কোচিং সেন্টারে লেখাপড়া করে আসছে। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার একাডেমিতে কোচিং চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অন্তত ২১ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের টিইউবওয়েলের পানি পান করে। তারপর থেকেই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কোচিং সেন্টারে ছেলে-মেয়ে উভয়ই লেখাপড়া করলেও শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীরা ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এই শিক্ষার্থীদের উপসর্গ বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তারা হলেন, বগারপাড় এলাকার শফিকুল ইসলাম এর মেয়ে চৈতি, ফেরদৌস এর মেয়ে রাখি, লিমন তরফদারের মেয়ে তিথি, আল আমিনের মেয়ে আশা, ফজলুল হকের মেয়ে অন্তরা, আঃ খালেকের মেয়ে নাদিয়া, লাভলু মিয়ার মেয়ে লাবণ্য, আলমাছ এর মেয়ে তর্জনী, টুকন মিয়ার মেয়ে তমা ,তোজাম্মেল হক এর মেয়ে মেঘলা। পরে তাদের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এদিকে অবস্থার অবনতি দেখে লাভলু মিয়ার মেয়ে লাবণ্য , আল আমিনের মেয়ে আশাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও লিমন তরফদারের মেয়ে তিথিকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
এদিকে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালীন সময়ে আজিজল এর মেয়ে ৬ ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আখি, নুরুল ইসলাম মেয়ে নিরা, আমিনুর এর মেয়ে আরফিন, ইমরানের মেয়ে নুসরাত অসুস্থ পড়লে তাদেরকেও সরিষাবাড়ী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের পাশে কোনো শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা দেখে ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে এবং পরিচালক কামরুজ্জামান লিটন নিজেও অসুস্থ হয়ে সোমবার দুপুর থেকে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিদ্যালয়ে ৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার পরথেকেই বিদ্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে।
৬ ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আখি জানান, পানি আর ঝালমুড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। পায়ে বল পায়না মাথা ব্যাথা করতেছে।
শিক্ষার্থী আরফিন জাহান জানায়, কোচিং সেন্টারে এসে পানি খাওয়ার আধা ঘন্টা পর বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট
দেখা দেয়। এরপর শরীর জিমিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আরেক শিক্ষার্থীর মামা জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
ভাগনী বিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য সরিষাবাড়ী হাসপাতালে নিয়ে আসি। সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, স্কুলে পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে ১৪ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা খারাপ দেখে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে।
চাইল্ড কেয়ার একাডেমি কোচিং সেন্টারের পরিচালক কামরুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ। শিক্ষার্থীরা স্কুলে টিইউবওয়েলের পানি খেয়ে কেনো অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমি কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না।
এদিকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারিপরিকল্পনা কর্মকর্তা বদরুল ইসলাম জানান, রবিবার রাত আটটার পর থেকেই হাসপাতালে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। রাতেই আমরা হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদান করি এবং তারা স্বাভাবিক হয়ে কয়েকজন বাড়ীতে চলে যায়। তাদের তিনজন ছাত্রী আবারো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এরা কোন ভয় থেকেই এমন করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারকে একাধিকবার কল দেওয়া হলে ফোন কেটে দেওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।