Date: May 16, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রাজশাহী / আত্রাইয়ে পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বাড়ি-ঘর হারানো পরিবারের সদ্যদের - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্...

আত্রাইয়ে পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বাড়ি-ঘর হারানো পরিবারের সদ্যদের

October 01, 2023 08:35:42 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
আত্রাইয়ে পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বাড়ি-ঘর হারানো পরিবারের সদ্যদের

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর আত্রাইয়ে বেড়িবাঁধ কাম পাকা সড়ক ভেঙ্গে পানির স্রোতে  বাড়ি-ঘর হারানো পরিবারের সদস্যরা দিশে হারা হয়ে পরেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, তাদেরকে পর্যাপ্ত সরকারী সহায়তা দেয়া হচ্ছেনা। পানি বন্দি অন্যান্য পরিবারে যেভাবে মাত্র ১০কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে ঠিক একই রকম সহায়তা দেয়া হয়েছে তাদেরকেও। কিন্তু এর বাহিরে নগদ টাকা বা সুখনা খাবারের কোন সহায়তা করা হয়নি।

এদিকে কৃষি অফিস সূত্র জানায়, নদীতে পানি কমলেও শনিবার দুপুর থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে প্লাবিত হয়ে আরো ১৭৪০বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলে গেছে। এখনো পানির স্রোত   থাকায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ আটকাতে পারেনি। তবে পানি আটকাতে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা

রোববার দুপুরে আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ী বলরাম চক সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আত্রাই নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপে আত্রাই উপজেলার বলরামচক শ্মশানঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধ কাম পাকা সড়ক ভেঙ্গে যায়। এসময় ভাঙ্গনের মুখে পরে পানির তীব্র স্রোত ৭/৮টি বাড়ী বিলিন হয়ে যায়। ফলে পরিবারের সদস্যরা ঘর-বাড়ী হারিয়ে দিশে হারা হয়ে পরেছেন। তারা কুল কিনারা না পেয়ে বলরামচক চৌধুরী পাড়ায় বিভিন্ন জনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে আছে।

ঘর হারানো মনছের আলী বলেন, তিনি ওইস্থানে জায়গা কিনে নিয়ে ইটের বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। বাড়ী এবং ওইটুক বাড়ীর জায়গা ছাড়া আর কোন সম্পদ নেই। কিন্তু নিমিশের মধ্যেই পানির চাপে পাকা সড়ক ভেঙ্গে ইটের বাড়ী বিলিন হয়ে যায়। কিভাবে বাড়ী নির্মান করবেন আর পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ কিভাবে করবেন তা নিয়ে দিশে হারা হয়ে পরেছেন।

মজিবর রহমানের স্ত্রী জামেনা বিবি বলেন, পাকাসড়ক ভেঙ্গে যাবে দেখে ঘর থেকে জিনিসপত্র অন্য জায়গায় পার করতে করতে চোখের পলকে ভেঙ্গে পানিতে ভেসে নিয়ে গেল।আমরা এখন অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে আছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন,পরিবারে আমরা ৫জন সদস্য আছি। পানিবন্দি পরিবারে যেভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে ঠিক সেভাবেই আমাদেরকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। গত চার দিনে মাত্র ২০কেজি  পেয়েছি। এছাড়া আর কোন সহায়তা দেয়া হয়নি।

একই স্থানে বাড়ী হারানো মনা হোসেন বলেন, আমাদের থাকার জায়গা নেই, স্ত্রী সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিবো তার কোন ব্যবস্থা করতে পারছিনা। অথচ আমাদেরকে আর দশজনের মতো মাত্র ১০কেজি চাল দিয়েছে। তরি-তরকারী,বা তেল,পেয়াজ কেনার জন্য নগদ কোন অর্থ সহায়তা দেয়া হয়নি। তাহলে আমরা খাবো কি। এছাড়া থাকার মতো এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় অন্যের বাড়ীর বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে আছি। তিনি সহায়তায় নগদ অর্থ, সুকনা খাবারসহ সহায়তার পরিমান বাড়ানোর জন্য এবং বাড়ী নির্মান ও পূর্নবাসনে সরকারের কাছে সার্বিক সহায়তা কামনা করেছেন। ওই ভাঙ্গনে রুবেল হোসেন, বাবু প্রামানিক, সুমন হোসেন ও রাজু আহম্মেদের বাড়ী বিলিন হয়ে যায়।

এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার কুন্ডু জানান, শনিবার দুপুর থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় উপজেলার পতিসর, সমসপাড়া, ভাঙ্গাজাঙ্গাল, হেঙ্গলকান্দিসহ কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়ে আরো এক হাজার ৭৪০ বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলে গেছে। এনিয়ে গত কয়েকদিনে এই উপজেলায় মোট প্রায় সাত হাজার ৩৬৫ বিঘা জমির আমন ধান বন্যার পানিতে তলে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়া উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, এখন পর্যন্ত পানিবন্দি এক হাজার ৩০০পরিবারকে ১০কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে। বিকেলে মিটিং করে সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, আপাতত পানিবন্দি সবাইকে শুধুমাত্র ১০কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে। বাড়ী-ঘর হারানো পরিবারের থাকা, চলার ব্যপারে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। কোন সমস্যা হলে তা সমাধান করা হবে। এছাড়া পানি নেমে গেলে বাড়ী নির্মান বা পূর্ণবাসনে সার্বিক সহায়তা করা হবে।

নওগাঁ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, বর্তমানে আত্রাই নদীতে বিপদ সিমার ৮৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পাানি প্রবাহিত হচ্ছে। যদি কোন ভারী বৃষ্টিপাত না হয় এবং উজান থেকে ঢলের পানি নেমে না আসে তাহলে নদীতে পানি কমার হার অব্যাত থাকবে।

উল্লেখ্য, আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত মঙ্গলবার রাতে আত্রাই নদীর আত্রাই উপজেলার নন্দনালী বেড়িবাঁধ,বুধবার রাতে উপজেলার আত্রাই-সিংড়া পাকা সড়কের জগদাস বটতলী এবং শিকারপুর নামকস্থানে এবং বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কাশিয়াবাড়ী বলরামচক শ্মশান ঘাট এলাকায় নদীর বেড়িবাঁধ কাম পাকা সড়ক ভেঙ্গে যায়। এতে নদী থেকে পানি লোকলয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রায় ১২ হাজার পরিবার পারিবন্দি হয়ে পরেছে এবং উপজেলায় মোট প্রায় সাত হাজার ৩৬৫ বিঘা জমির আমন ধান বন্যার পানিতে তলে গেছে।