Date: May 12, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রংপুর / পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সে আটকে আছে ৩ হাজার গ্রাহকের ২ কোটি টাকা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সে আটকে আছে ৩ হাজার গ্রাহকের ২ কোটি টাকা

August 28, 2024 09:13:12 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সে আটকে আছে ৩ হাজার গ্রাহকের ২ কোটি টাকা

অসহায় সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের কর্মকর্তারা। সরল বিশ্বাসে সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ পেতে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও একক বিমা করেন প্রায় ৩ হাজার দরিদ্র মানুষ। তাদের সবার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে কারো ৫ বছর, কারো  ৬ বছর, কারো বা  ৮ বছর আগে মেয়াদ পূর্ণ হয়। এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, কোম্পানির অফিসও হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। নীলফামারীর সদর ও  সৈয়দপুর উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পাওনাদার গ্রাহকরা এজেন্টদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছেন। এ জন্য তারা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের নামে নীলফামারী  আদালতে মামলা করেছেন  স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলাম।

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর শাখায় গ্রাহক রয়েছে ৩ হাজার  জন। এসব গ্রাহকের প্রায় ২ কোটি টাকার বিমা পলিসি রয়েছে। তাদের সবারই মেয়াদ শেষ হয়েছে। সময় শেষে বিমা দাবির টাকা পেতে কোম্পানির পেছনে ঘুরছেন ভুক্তভোগী এসব গ্রাহক। টাকা উদ্ধারের আশায় প্রথমে তারা নীলফামারী জেলা অফিস, এরপর রংপুর বিভাগ এবং সর্বশেষ কোম্পানির প্রধান অফিসে ধরনা দেন। কাগজপত্রও জমা দেন, কিন্তু টাকা পাননি। শেষ ভরসা হিসেবে তারা এখন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দ্বারস্থ হয়েছেন।

বিমা দাবির টাকা না পাওয়া সৈয়দপুর কামারপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বিধবা রতনা বেগম বলেন, একসঙ্গে মুনাফাসহ আসল পাব— এ আশায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতি মাসে ২০০ টাকা কিস্তির ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিমা করি পদ্মা ইসলামী লাইফে। ২০১৭ সালে বিমার মেয়াদ শেষ হয়। পরে টাকার জন্য রংপুর, ঢাকা, নীলফামারী— তিন অফিসের স্যারদের পেছনে দৌড়াচ্ছি, কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। আশা করেছিলাম জমানো টাকা দিয়ে কিছু বড় ছেলেকে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে আর অন্যের বাড়িতে আর কাজ করতে হবে না।  কিন্তু তারা টাকা দিচ্ছে না।

নীলফামারীর সদরের বাসিন্দা জালাল উদ্দীন নামের এক গ্রাহক বলেন, ভবিষ্যৎ জীবনের কথা  চিন্তা করে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখায় বিমা পলিসি করি। যার মেয়াদ পূর্ণ হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার প্রায় ৬ বছর পার হলেও টাকা পাচ্ছিনা ভেবেছিল ওই টাকা পেলে মেয়ের বিয়ে দিবে। কিন্তু লাভ তো দুরের কথা জমানো আসল টাকাটাই পাচ্ছি না। টাকা  না পাওয়ায় মেয়ের বিয়ে দিতে পারছি না।

প্রতিষ্ঠানটির সৈয়দপুর শাখা ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলাম  বলেন, ২০০৫ সালের শেষের দিকে কোম্পানিটির একটি সভা হয় সৈয়দপুরে। সভায় বিমা করলে দিগুণ লাভ পাওয়া যাবে বলে লোভ দেখানো হয়। এজেন্ট হিসেবে কাজ করলে অনেক টাকা উপার্জন করা যাবে, অল্পদিনে বাড়ি-গাড়ি করা যাবে বলেও স্বপ্ন দেখানো হয়। তাদের কথায় প্রথমে ১০ বছর মেয়াদি একটি ক্ষুদ্র বিমা করি। এরপর তাদের সঙ্গে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করি। প্রায় ৩ হাজার পলিসি করিয়েছি। এখন মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন সবাই আমার কাছে এসে টাকা চান। তাদের কারণে বাড়ি থাকতে পারছি না।

তিনি কোম্পানির বগুড়া এবং রংপুর অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ ও মুকসেদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘ঢাকা অফিস থেকে এরই মধ্যে ১২ গ্রাহক বিমা দাবির চেক নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওই দুজনের কারণে আমরা টাকা পাচ্ছি না। তারা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোম্পানিও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ তাই ওই দুইজনসহ কোম্পানির চেয়াম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ ভূইয়া ও হিসাব কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেনের নামে গত মাসের ২০ তারিখে নীলফামারী আদলতে একটি মামলা দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে জানতে  মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, ফরিদ আহম্মমেদ ও মোখছেদ আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)  চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন  বলেন, ‘বিমা আইন অনুসারে, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয় তাহলে বর্তমান ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি হারে বিমা দাবির সুদ দিতে হয়। তিনি আরও বলেন, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। হতদরিদ্র মানুষের বিমা দাবি যাতে দ্রুত পরিশোধ হয় সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।