Date: May 12, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রংপুর / ভাগ্যের নির্মমতায় আশ্রয়হীন মমতাময়ী মা সুফিয়া - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ভাগ্যের নির্মমতায় আশ্রয়হীন মমতাময়ী মা সুফিয়া

May 11, 2025 09:13:15 PM   ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
ভাগ্যের নির্মমতায় আশ্রয়হীন মমতাময়ী মা সুফিয়া

মা দিবসে মায়ের ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে দেখা মেলে এমন এক মমতাময়ী মাকে, যিনি জীবনের সাথে সংগ্রাম করে এখনো বেঁচে আছেন। অতিকষ্টে পার করছেন প্রতিটা দিন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী থানা আওতাধীন ১৮ নং শুখান পুখরী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে দেখা মেলে এই মমতাময়ী মায়ের।

সরেজমিনে কথা হলে চোখের কোণে পানি আটকে রেখে তিনি তার হৃদয়ের কথা শোনান। তিনি বলেন, শুরুর জীবনটা অনেক সুন্দর ছিলো তাদের। স্বামী আজিদসহ তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে ভালোই যাচ্ছিলো তাদের জীবন। কিন্তু এই ভালো থাকাটা বেশি দিন থাকতে পারি নাই, হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে চলে যান স্বামী আজিদ। স্বামীর মৃত্যুর পর চারপাশে যেনো শূন্যতা অনুভব করতে থাকি। কী করবো, কিভাবে মানুষ করবো দুই মেয়েকে? কিন্তু একটাই ভাবনা ছিলো মাথায়—মেয়েদের মানুষ করতেই হবে। মেয়েদের কথা ভেবে কখনো আর বিয়ের কথা চিন্তাও করেননি এই মমতাময়ী মা।

তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেয়ে না খেয়ে বড় করেছি মেয়েদের। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পেতাম, সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে বিয়ে দেই দুই মেয়েকে।

মেয়েদের বিয়ের পর আরো যেনো একা হয়ে যান এই মমতাময়ী মা। তিনি বলেন, টাকা পয়সা তেমন না থাকায় কিনতে পারি নাই বসত ভিটা, তাই অন্যের জমিতে একটা ঘর তুলে কোন মতো দিন পার করছি। বয়স বেড়েছে, শরীরের চামড়ায় ঝুল ধরেছে, তাই এখন আর তেমন কোন কাজ করতেও পারি না। অন্যের কাছে হাত পেতে কিছু টাকা নেই, আর বিধবাভাতার যে টাকা পাই, সেটা দিয়েই চলতেছে আমার জীবন।

তিনি চোখের কোনে পানি নিয়ে বলেন, "অনেক দিন না খেয়েও থেকেছি। কী করবো, কাকে বলবো? বয়স বাড়ার কারণে কোনো কাজেও নেয় না কেউ। বয়স ৭০ বছর হওয়ার কারণে শরীরে নানা রোগ দেখা দিয়েছে, কিন্তু টাকার অভাবে কিনতে পারি না ঔষধ।"

মেয়েদের কথা জানতে চাইলে বলেন, "মেয়ে মানুষ অন্যের ঘরে দিছি, তাদেরকেই বা কী বলবো? আমার জীবন তো শেষের দিকে। দোয়া করি, মেয়ে দুইটা যেনো ভালো থাকে।"

বাস্তবতা কতোটা নির্মম! নিজের এতো কষ্টের পরেও তিনি সন্তানদের কথা ভাবেন। মা হয়তো এমনি হয়। সমাজের বিত্তবানদের একটু সহযোগীতায় হয়তো ভালো থাকতে পারেন এই মা। তার এমন দশায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।