
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুইটি প্রশাসনিক ভবনসহ মোট ১২টি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পুনঃনামকরণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন এখন থেকে পরিচিত হবে 'প্রশাসন ভবন-১' নামে এবং এম মনসুর আলী প্রশাসন ভবনের নাম রাখা হয়েছে 'প্রশাসন ভবন-২'। তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের নতুন নামকরণ করা হয়েছে 'সিনেট ভবন'। একইসঙ্গে ড. কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'ড. জাবির ইবনে হাইয়ান একাডেমিক ভবন' এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'ড. জামাল নজরুল ইসলাম একাডেমিক ভবন'।
আবাসিক হলগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামকরণ করা হয়েছে 'বিজয়-২৪ হল', এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'জুলাই-৩৬ হল'। অ্যাকাডেমিক ভবন হিসেবে কৃষি অনুষদ ভবনের নাম সংক্ষিপ্ত করে রাখা হয়েছে 'কৃষি ভবন' এবং শেখ রাসেল মডেল স্কুল এখন পরিচিত হবে 'রাবি মডেল স্কুল' নামে।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম প্রধান অবকাঠামো শেখ কামাল স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'রাবি স্টেডিয়াম'। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রধান প্রবেশদ্বার—কাজলা গেট এবং বিনোদপুর গেট—নতুনভাবে নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে 'শহীদ সাকিব আঞ্জুম গেট' এবং 'শহীদ আলী রায়হান গেট' নামে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান বলেন, "স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, এটি ’২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের প্রতিফলন। শিক্ষাঙ্গন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত। জুলাই আন্দোলন আমাদের সামনে সেই দাবি এনেছিল। পুরনো নামগুলো ছিল একটি নির্দিষ্ট দলীয় ইতিহাসের প্রতিনিধিত্বকারী, যেখানে বহু শিক্ষার্থীর মতামত উপেক্ষিত ছিল। এখনকার এই পরিবর্তন, বিশেষ করে শহীদ সাকিব আঞ্জুম ও শহীদ আলী রায়হানের নামে গেটের নামকরণের মাধ্যমে তাঁদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, "ভবনের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত আগে নেওয়ার দরকার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট, কাজলা গেটসহ কয়েকটি ভবনের নাম পরিবর্তন বিষয়ে তাঁদের আরেকটু ভাবা উচিত। আমরা শিক্ষার্থীরা এ গেট দুটিকে বিনোদপুর ও কাজলা নামেই চিনি। এছাড়াও ড. ওয়াজেদ মিয়া এবং ড. কুদরত-ই-খুদা ভবনের নাম পরিবর্তন অযৌক্তিক। তাঁদের তো কোনো দোষ ছিল না।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, "সিন্ডিকেট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নামগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা যে নামই নির্ধারণ করি না কেন, এতে সমালোচনা আসবেই। নির্মাণাধীন নতুন দুটি হলের নাম পরিবর্তন করতে হলে যাবতীয় নথি পরিবর্তন করতে হবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে আমরা এ দুটি হলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।"
উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধু হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শেখ রাসেল মডেল স্কুল, শেখ কামাল স্টেডিয়াম, নির্মাণাধীন এএইচএম কামারুজ্জামান ও শেখ হাসিনা হলেরও নামফলক ভেঙে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সেদিনই তাঁরা এসব স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবি জানান।