
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাতে বেগম খালেদা জিয়া ও মন্নুজান হলে শিবির–সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী ঐক্যজোটের আনা প্রায় ৮০০ প্যাকেট খাবার আটকে দেয় নির্বাচন কমিশন ও হল প্রশাসন।
সূত্র জানায়, সেদিন রাতে ঐক্যজোট প্রার্থী পরিচিতি সভার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে তারা বাইরে থেকে কয়েকশ চেয়ার ভাড়া এনে হলে প্রবেশের চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রশাসন তাৎক্ষণিক আপত্তি জানায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হলের নিজস্ব চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করেই অনুষ্ঠান করতে হবে। পরে রাত আটটার দিকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাইরে থেকে আনা খাবার হলে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে খাবারগুলো জব্দ করেন। পরে পাঁচ বস্তা খাবার ফেরত পাঠানো হয়। এসব খাবারের প্যাকেটে সিঙ্গাড়া, চপ, চকলেট, ফল ও মিষ্টি ছিল।
ঘটনার পর শিবির–সমর্থিত প্রার্থীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। তাদের অভিযোগ, কমিশন ও হল প্রশাসন বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। রাবি শিবির শাখার সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেলের প্রার্থী মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “আমাদের প্যানেল কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করেনি। অথচ ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল ক্লাসরুমে প্রচারণা চালালেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের শুধু খাবার বিতরণ করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি বাইরে থেকে আনা চেয়ারও আটকে দেওয়া হয়েছে—এটি স্পষ্ট পক্ষপাতমূলক আচরণ।”
অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী হলে হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার বা উপহার বিতরণ করা নিষিদ্ধ। এটি স্পষ্টভাবে নির্বাচনী সমতা নষ্ট করে। তিনি জানান, “যাদের বেশি অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে তারা শিক্ষার্থীদের খাবার দিচ্ছে, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আমরা চাই, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হোক এবং আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা হোক।”
তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়া হল পরিদর্শনের সময় তিনি দেখেন, এক শিক্ষার্থী ৮০০ প্যাকেট খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, এটি সম্মিলিত ছাত্র জোটের পরিচিতি সভার জন্য আনা হয়েছে। পরে তিনি নির্দেশ দেন, খাবারগুলো হলের বাইরে ফেরত পাঠাতে।
এই ঘটনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরিবেশে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। একদিকে প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন প্রশাসনের পক্ষপাতের, অন্যদিকে কমিশন বলছে—সবাইকে সমান নিয়মের মধ্যে আনতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।