
সালথা প্রতিনিধি:
পাট পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এখানে মোট আবাদি ১৩ হাজার হেক্টর জমির প্রায় ৯০ ভাগ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। সারাবছর সহজ সংরক্ষণ, বেশি লাভ ও সহজে উৎপাদন করার জন্য দিন দিন পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ক পেঁয়াজ উত্তোলন করে বিক্রি করছে উপজেলার অনেক পেঁয়াজ চাষিরা। এর ফলে মোট উৎপাদন কমে যেতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি পেঁয়াজ মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। উপজেলার মোট চাষি প্রায় ৫০ হাজার, চলতি মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি কৃষক পেঁয়াজ চাষ করছে। আবহাওয়া পেঁয়াজ উৎপাদনের অনুকুলে থাকায় মৌসুমে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া চলতি মৌসুমে কৃষক উন্নত জাতের পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করেছে। এর ফলে আগের চেয়ে পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে প্রায় ৫ শত জন কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজ বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়।
উপজেলার কয়েকজন পেঁয়াজ চাষির সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে অতীতের চেয়ে খরচ বেশি হয়েছে। ৪ হাজার থেকে শুরু প্রায় ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এক কেজি পেঁয়াজ বীজ কিনতে হয়েছে। তাছাড়া মজুরী, পরিবহন খরচ ও রাসায়নিক সার সহ মোট উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গত মৌসুমের শেষের দিকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও বর্তমানে দাম বেশি হওয়ায় কৃষক কিছুটা লাভবান হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে পেয়াজ আমদানি না করা, পেয়াজ চাষে ভর্তুকি দিয়ে প্রণোদনা বৃদ্ধির দাবি করেন তারা।
মাঠ থেকে অপরিপক্ক পেঁয়াজ উত্তোলনের বিষয়ে তারা জানান, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় কিছু সংখ্যক কৃষক অপরিপক্ক পেঁয়াজ উত্তোলন করছে। পেঁয়াজ পরিপক্ক হতে সময় লাগবে তখন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কৃষক ছোট, মাঝারি ও কুসি পেঁয়াজ আগাম উত্তোলন করে বিক্রি করছে। তবে পরিপক্ব পেঁয়াজ উত্তলোন করলে মোট উৎপাদন দেড়গুন বা দ্বিগুণ হত। পারিবারিক ও বৃহদাকার পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মানের দাবি করেন কেউ কেউ।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১১২৩ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে ১১১৫০ হেক্টর। পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে আমরা সার, বীজ প্রদান করেছি। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছে। সরকারিভাবে বৃহদাকার পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে সারাবছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে কৃষক বিক্রি করতে পারবে। অপরিপক্ক পেঁয়াজ উত্তোলন করলে মোট উৎপাদন কমে যাবে। তাই চাষিদের অপরিপক্ক পেঁয়াজ উত্তোলন না করতে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।