
রংপুর প্রতিনিধি:
মৌসুম অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টিতে মুখরিত থাকে ফসলের মাঠ। বিগত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। তীব্র তাপদাহের পর গত কয়েক'দিনের বৃষ্টিতে আষাঢ়ের বৃষ্টি নেমেছে চলতি মৌসুম শ্রাবণে। ফলে বিনাসেচে অধিক উৎপাদনের আশায় হাসি ফুটেছে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের মুখে। তবে সারের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে।
কিছুটা দেরি হলেও বৃষ্টির পানি পেয়ে ফসল উৎপাদনে মাঠেগুলোতে পুরোদমে বেড়েছে কৃষকের ব্যস্ততা। এই মৌসুমে বৃষ্টি হওয়ায় সেচ খরচেও লাভবান হবেন কৃষকেরা।
কৃষকদের অভিযোগ, অসময়ের বন্যা, খরা আর অনাবৃষ্টিসহ নানা কারণে ব্যহত হচ্ছে আমন ধানের রোপণ। সঙ্গে ভরা বর্ষায় প্রকৃতির বিরূপ আচরণে এবার অনাবৃষ্টিতে তাদের বেশির ভাগই হয়ে উঠেছে সেচনির্ভর। এতে করে বাড়তি খরচের ধকল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সঙ্গে শ্রমিকের দিনমজুরি বৃদ্ধি, আবার কখনো শ্রমিক সংকটও ভোগাচ্ছে তাদের। এখন সারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করার কথা থাকলেও মানছে না ব্যবসায়ীরা।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রংপুর অঞ্চলে ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত রোপণ সম্পন্ন হয়েছে ৪৫ হাজার ৮' শ হেক্টর জমিতে । প্রতি হেক্টর জমিতে সেচ ব্যয় হয় সাড়ে সাত হাজার টাকা।
একদিকে সেচ খরচ না হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে কৃষকদের মাঝে। তবে আতঙ্কিত রয়েছে সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। এতে দুঃশ্চিন্তায় কাটছে তাদের ব্যস্ত সময়।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য সূত্রে আরও জানা গেছে, আমন ফসলে সারের চাহিদা বিঘা প্রতি গড়ে ২৫ কেজি। কৃষকদের অজ্ঞতা বা ফসল ফলানোর প্রতিযোগিতায় সারের ব্যবহারে এখনো সচেতন নন কৃষকরা। ফলে ফসল অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় বেশি সার ব্যবহার করছে। বর্তমান বাজারে সারের দাম কেজিপ্রতি ৮১ টাকা। কৃষক কিনবে ২২ টাকা। অর্থাৎ সরকার এখনও ভর্তুকি দিচ্ছেন ৫৯ টাকা।
তবে চাহিদা অনুযায়ী সারের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। ইউরিয়া সার রয়েছে ৩৯০০ মেট্রিক টন, টিএসপি ৫৮৮০ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩১৮৬ মেট্রিক টন, এমওপি ৬৩৫১ মেট্রিক টন।
বিএডিসি, ইউরিয়া বাফার গোডাউনসহ তালিকা অনুযায়ী বিসিআইসি ডিলার ১০৬ জন, বিএডিসি খুচরা ডিলার ১৮২, এছাড়াও খুচরা দোকানে পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর'র অতিরিক্ত উপপরিচালক ( শস্য) কৃষিবিদ মাহবুবার রহমান বলেন, মন্ত্রনালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর পরই কৃষি অধিদপ্তর তৎপর। ১ আগস্ট'র আগের ক্রয় মূল্য সার আগের দরেই বিক্রি করতে হবে। এই মনিটরিং অব্যাহত রাখা হয়েছে। নায্য মূল্য আদায়ের জন্য মোবাইল কোর্ট ও অভিযান চালু রাখা হয়েছে।
সার মূল্য নিয়ে বৃদ্ধি নিয়ে বলেন, লালবাগ মের্সাস ইউনিক ট্রেডার্স সিন্ডিকেট বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার বলেন, বর্তমান সারের দাম কিছুটা বেড়েছে তবে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় মনে হয় না অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হতে হবে কৃষকদের। নায্য মূল্যে সার বিক্রি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ১ তারিখের আগের উত্তেলিত ইউরিয়া সারের বস্তা ৮০০টাকা এবং কেজিপ্রতি ১৬ টাকা দরেই বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ১ তারিখ থেকে দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা বৃদ্ধির সার বাজারে আসেনি। তবে জানা গেছে কেজিপ্রতি ৬ টাকা বেশি হয়ে বিক্রি করা হবে ২২ টাকা। মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে,সরকার কর্তৃক ভর্তুকি কমিয়ে দেয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে তবে আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে জানান তারা।
সার কিনতে আসা কৃষক আলী হোসেন বলেন, ২ দোন জমিতে ধান চাষ করি। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উপকার হইছে। জমিতে সেচ দিতে হয় নাই। এই আবাদ দিয়ে সংসার চলে। বৃষ্টি হয়্যা বাড়তি খরচ কমছে। শুনছি সারের দাম বাড়ছে। কিন্তু আজকেও আগের দামেই সার কিনছি। ইউরিয়া প্রতি বস্তা ৮০০ টাকা। সারের দাম কম থাকলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আবাদ করি পরিবার নিয়া সুখে- দুঃখে দিন কাটে।
বাজারে রংপুর মেট্রোপলিটন মাহিগঞ্জ-১ এর সার মনিটরিং দায়িত্বরত উপ সহ-কৃষি অফিসার নুরুন্নাহার খানম বলেন, সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সার পর্যাপ্ত রয়েছে। নায্য মূল্যে সার বিক্রিতে মাঠে আমরা তৎপর। এখন পর্যন্ত আগের দরেই সার বিক্রি হচ্ছে। আবারও এই অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে আশা ব্যক্ত করছি।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মওলা বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। বর্তমানে সারের সংকটও নেই। তবে বিশ্ব বাজারে সারের দাম বাড়াতে আমাদের দেশে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর জন্য সরকারকে দায়ী করা ঠিক হবে না। কারণ দাম বাড়ালেও সরকার কিন্তু ঠিকই ভর্তুকি দিচ্ছেন।
একদিকে শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভেসেছে কৃষকের সেচ হাহাকার, ফুটেছে হাসি। অপরদিকে সারের দাম কিছুটা বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকরা। সারের দাম স্বাভাবিক হোক, ক্রয় ক্ষমতার নাগালেই থাকুক এই প্রত্যাশা কৃষকদের।