
মাগুরা প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি স্কুলের শ্রেণি কক্ষে পিতা ও পুত্রকে অমানসিক নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ভিডিওকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মনে জন্ম দিয়েছে হাজারও প্রশ্ন। মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওই দুইজনকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
কল্পিত অভিযোগ এনে মাগুরার বাসিন্দা এই দুই পিতাপুত্রকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে স্কুল শিক্ষিকা ও তার স্বজনেরা। মেয়ে ও বোনকে ধর্ষণের এমন কাল্পনিক, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, সাজানো অভিযোগ এনে পিতা ও পুত্রের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনে বিস্মিত মাগুরাসহ সারা দেশের মানুষ। ধর্ষণের অভিযোগের কারণে ছাত্রীটির মেডিকেল টেষ্ট করানোর পর ধর্ষণের হয়েছে এমন কোন কিছু পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, গত ১৭ ই মার্চ আড়ুয়াকান্দি-মির্জাকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে তালা দিয়ে পিতা ও পুত্রকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতিত পিতা ও পুত্র ওই এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা । তাদের বাসা মাগুরায় বলে ভিডিওর মধ্যে এক নির্যাতন কারী উল্লেখ্য করলেও মধুখালি থানা পুলিশ বলছে প্রকৃতপক্ষে তাদের বাড়ী মাগুরার সীমানা ঘেষা মধুখালি উপজেলার কামারখালী ইউপির সালামতপুর গ্রামে।
জানা যায়, ওই এলাকার নাজিম উদ্দিনের মেয়ে ও কুতুব উদ্দিনের বোন মাদকসেবী,মাতাল,নেশাখোর রুমা আক্তারের নেতৃত্বে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তিনি আড়ুয়াকান্দি-মির্জাকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও নিঃসন্তান নারী। নির্যাতিত ছেলের বোন ও নির্যাতিত পিতার মেয়ে ওই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। পিতার বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণ ও পুত্রের বিরুদ্ধে বোনকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে এনে নাটক সাজিয়ে ৫০,০০০ হাজার টাকায় মেয়েকে বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দিলে পিতা-পুত্র রাজি না হওয়ায় স্থানীয় নিকটাত্মীয় সন্ত্রাসী ও বখাটেদের সাথে নিয়ে স্কুল কক্ষে তালা দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদেরকে নির্যাতন করে। রুমা আক্তার ফরিদপুর শহরে বসবাস করেন। নিঃসন্তান হওয়ার কারনে ওই মেয়েটাকে মাঝে মাঝে তার বাসায় নিয়ে রেখে ভালো খাওয়া-পরা এবং ভালো পরিবেশে রাখার প্রলোভন দেখায়। যেহেতু এরা (নির্যাতিত ব্যক্তিরা) এই এলাকার বাসিন্দা না, এখানে ভাড়া থাকে সেহেতু শিক্ষিকা মহিলাটি ওই মেয়েকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার আশায় তাকে শিখিয়েছে তার বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ তুলতে। তারপর এই অভিযোগে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে যাহাতে তারা মেয়েটাকে রেখে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এই সুযোগে মহিলা এই মেয়েটাকে স্থায়ীভাবে পেয়ে যায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধর্ষণের যে অভিযোগটি করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াটি, পরিকল্পিত সাজানো নাটক, এমনকি ঘটনার সময় স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। নির্যাতনকারীগন সবাই একই গোষ্ঠীর। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা বলেন একজন শিক্ষকের আচরণে এমন হওয়া কখনো কাম্য নয় ।
ভিডিওতে দেখা যায়, পিতা পুত্রকে নির্যাতনের সময় তাদের আত্মচিৎকার দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ঐ শিক্ষিকা নৃত্য করছেন যেটা একজন স্বাভাবিক মানুষ ও একজন বিবেকবানের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা যেন আলিফ-লায়লার ডায়নীকেও হার মানায়। এই ভিডিও টা সম্প্রতি বাজারের ভাইরাল হলে তাদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে মাগুরা,ফরিদপুর সহ সারা দেশের মানুষ তারা ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ফরিদপুর ঐ বিদ্যালয়ের কাছের বাসিন্দা হেমায়েত নামের এক যুবক বলেন, যদি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তাহলে বিচার করবে প্রশাসন, তারা তো কোন বিচারক নয়। তিনি আরো বলেন, এই মহিলা এর আগেও অনেক ফাঁদ পেতেছে যে টার মূল লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নেওয়া। ওই এলাকার ইউপি মেম্বার বাদশার সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে চাঞ্চকর তথ্য পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে এটি পরিকল্পিত মিথ্যা মেয়েটিকে ভয় ভীতি দেখিয়ে বলানো হয়েছে। যেটার মূল লক্ষ্য ছিল মেয়েটিকে দত্তক হিসেবে নেয়া। বাবা ও ভাই রাজি না হয় তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন।
এ বিষয়ে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে ২০শে মার্চ মধুখালী থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত সাত-আট জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে নির্যাতিত পিতা। কুতুব নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
এ বিষয়ে সোমবার ফরিদপুর জেলা পুলিশ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আয়োজন করে বলেন, এ ঘটনায় প্রধান আসামী কুতুবসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত মোট ৭ জনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে,দুইজন কোর্ট থেকে আগাম জামিনে আছেন।
ব্রিফিং এ আরো জানানো হয়, ছাত্রীটির মেডিকেল টেষ্ট করানো হয়েছে। ধর্ষণের হয়েছে এমন কোন কিছু পাওয়া যায়নি। ঐ ছাত্রী পুলিশকে জানিয়েছে শিক্ষিকা টাকা দিয়ে এবং তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পিতা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছে।