
পাঁচবিবি প্রতিনিধি, জয়পুরহাট:
প্রায় ছয় বছর আগে মাত্র ২১ হাজার টাকায় দেশীয় প্রজাতির একটি গাভী পালনের মধ্যদিয়ে গাভীর পালনের খামার তৈরীর স্বপ্ন দেখেন আফরুজা সুলতানা (৩৫) নামের এক গৃহবধূ। তবে একটি গাভী পালন করে খামার তৈরীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ খুব একটা সহজ ছিল না তার। মনের ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ছয় বছরের ব্যবধানে আজ তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন। সরকারী-বেসরকারী কোনো সহযোগীতা ছাড়াই নিজ বাড়ীতেই তৈরী করেছেন গাভীর খামার। খামারে বিদেশী প্রজাতির ১২টি গাভী রয়েছে। যার প্রতিটি গাভীর মূল্য ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা। শুনতে কিছুটা অবাক হলেও জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা খাসবাট্টা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী আফরুজা সুলতানা গাভী পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এলাকায় আজকে সবাই এখন তাকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে চিনেন। তাকে দেখে এলাকার অনেকেই গাভী পালনে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। নিজ উদ্যোগে গাভী পালন করে আজ তিনি স্বাবলম্বী। বর্তমানে তার খামারে আছে ১২টি গরু। তার মধ্যে তিনটা গাভীর পেটে বাচ্চা। আর কয়েক মাস পার হলেই তার খামারে আরও তিনটা গাড়ী যোগ হবে। নতুন অতিথির আগমনে একটু খুশিই তিনি। গাড়ীর গোবর দিয়ে তৈরি হয় জ্বালানী।রান্নার কাজে কোনো টাকা খরচ হয় না বলেও তিনি জানান।
আফরুজা সুলতানা বলেন, গাভীগুলোকে নিজের সন্তানের মতোই যত্ন করি। সময় মতো গোসল করাই, খাওয়াই, সন্তানকে যেভাবে লালন-পালন করতে হয়!
গাভী পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছয় বছর আগে ২১ হাজার টাকায় দেশীয় প্রজাতির একটি গাভী কিনে লালন পালন শুরু করি। খামারে এখন ১২ টি গাভী আছে।
২টি গাভী প্রতিদিন ১৫-২০ লিটার দুধ দেয়। আর সেই দুধ বিকালে স্থানীয় শিমুলতলী বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে গাভীর খাদ্য কিনে আনি।
দুধ বিক্রির ৪ লাখ টাকা দিয়ে এক বিঘা জমি নিয়ে সেখানে ঘাস আবাদ করছি। আমার স্বপ্ন একজন বড় খামারের মালিক হওয়া।
সরেজমিন দেখা যায়, অল্প বয়সে আব্দুস সাত্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বর্তমানে আফরুজা দম্পতির সংসারে রয়েছে দুই ছেলে। ছেলেরা পড়াশোনা করে। সংসার সামলে নিজে কিছু করার ইচ্ছা ছিল আমার। সেই থেকে তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন স্বামী আব্দুস সাত্তার। স্বামীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে টাকা নিয়ে আগে দেশীয় একটি গাভী কিনে যাত্রা শুরু করেন তিনি। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। এই ছয় বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার দুধ বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান। আগে গাভীগুলো তিনি নিজেই দেখাশোনা করতেন। তার এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে পরিবারের সকলেই এখন গাভীগুলোর পরিচর্যা করেন।
গাভীর খাবারের জন্য একবিঘা জমিতে আবাদ করেন ঘাস। অর্গানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়। নিজেদের কন্যা সন্তান না থাকায় গাভীকে কন্যা সন্তানের মতোই লালন-পালন করে আসছেন তিনি। তাঁর ইচ্ছা, একদিন তার অনেক বড় খামার হবে। সেখানে কাজ করে অনেক বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।