Date: May 14, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / রাজনীতি / জামায়াতের সাথে এনসিপির দ্বন্দ্ব নাকি রাজনৈতিক কৌশল? - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

জামায়াতের সাথে এনসিপির দ্বন্দ্ব নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

May 14, 2025 01:16:04 PM   অনলাইন ডেস্ক
জামায়াতের সাথে এনসিপির দ্বন্দ্ব নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

এক মঞ্চে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করলেও দাবি আদায়ের পরপরই প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এই দুটি দল হঠাৎ কেন এই দ্বন্দ্বে জড়ালো, সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। তবে এটি দ্বন্দ্ব না রাজনৈতিক কৌশল, সেই প্রশ্নও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে এনসিপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। এনসিপি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেও জামায়াতের সাথে তাদের মিত্রতার ইঙ্গিত বারবার আলোচনায় আসে। এনসিপির প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সাথে মঞ্চ ভাগ করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু হয়। ওই রাতে একে একে ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন আন্দোলনে যুক্ত হয়। আন্দোলনের পরিসর রাতেই বড় হলে পরদিন শুক্রবার বিকেলে অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার পর জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের নামে বিতর্কিত স্লোগান দেওয়া ও জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেয়ার ঘটনাও ঘটে। এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা জানান, এনসিপি মূলত মধ্যপন্থার রাজনীতি করে। তবে, শাহবাগে জামায়াত সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের কিছু কর্মকাণ্ড এনসিপির ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণার পরপরই এনসিপির উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দুটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, "৭১'র প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে।" কিছুক্ষণ পর তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, "আমাকে নিয়ে নোংরামি করতেসো, ঝামেলা নাই। ফ্যামিলি টাইনো না, যুদ্ধাপরাধের সহযোগী রাজাকারেরা। এটা লাস্ট ওয়ার্নিং।" কিছুক্ষণের মধ্যেই স্ট্যাটাসটি সরিয়ে নিলেও এর স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এনসিপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এনসিপি মধ্যপন্থার রাজনীতি করে, তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সঠিক অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, "যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের অবস্থান স্পষ্ট না হলে এনসিপি তার মিত্রতা পুনর্বিবেচনা করবে।"

অন্যদিকে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, "একজন উপদেষ্টা হিসেবে এমন বক্তব্য দেওয়া শপথের পরিপন্থী। তিনি যদি রাজনীতি করতে চান, তবে উপদেষ্টা পদ থেকে সরে আসা উচিত।"

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন সফল হওয়ায় তার কৃতিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। তবে এটি কৌশলগত পদক্ষেপও হতে পারে, কারণ সামনের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুতে দলগুলো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাইছে। অনেকের মতে, এনসিপি ও জামায়াতের দ্বন্দ্ব আপাতত মুখোমুখি হলেও এটি সাময়িক। শেষ পর্যন্ত একত্রে আন্দোলন করা সম্ভব বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

শেষ পর্যন্ত এই দ্বন্দ্ব কতটা বিস্তৃত হবে, নাকি আবারও একই মঞ্চে দেখা যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।