Date: May 14, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / আন্তর্জাতিক / গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় ২৮ জন নিহত, আহত কয়েক ডজন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় ২৮ জন নিহত, আহত কয়েক ডজন

May 14, 2025 01:17:42 PM   অনলাইন ডেস্ক
গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় ২৮ জন নিহত, আহত কয়েক ডজন

গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। হামাস পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই হামলায় আরও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হামাসের মুখপাত্রের দাবি, খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতাল লক্ষ্য করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো একযোগে অন্তত ছয়টি বোমা নিক্ষেপ করেছে, যা হাসপাতালের ভেতরের অংশের আঙ্গিনা ও আশেপাশের স্থাপনাগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল ইউরোপিয়ান হাসপাতালের নীচে অবস্থিত হামাসের একটি 'নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র'। আইডিএফ দাবি করেছে, হাসপাতালের নিচে হামাস তাদের সামরিক অপারেশন পরিচালনার জন্য একটি গোপন বাঙ্কার ব্যবহার করে আসছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, এটি নিরস্ত্র বেসামরিক স্থাপনার ওপর সরাসরি হামলা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলার পরপরই হাসপাতাল চত্বরে ছড়িয়ে পড়া ধ্বংসাবশেষে রক্তাক্ত দেহ ও ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছড়াছড়ি দেখা যায়। আহতদের অনেককে উদ্ধার করে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

একজন স্থানীয় চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, "হাসপাতালে কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ধোঁয়া ও ধুলার কারণে পুরো পরিবেশ ঢেকে যায়। আহতদের চিৎকারে পুরো হাসপাতাল প্রাঙ্গণ প্রকম্পিত হচ্ছিল।"

হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা জানান, হামলার পর হাসপাতালের আঙ্গিনায় বেশ কয়েকটি গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে রোগী পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি বড় বাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।

হামলার পরপরই হাসপাতালের আকাশে একাধিক ইসরায়েলি ড্রোনকে চক্কর কাটতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এই ড্রোনগুলোর কারণে উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। এমনকি আহতদের সাহায্য করতে আসা অনেককেই ড্রোন হামলার ঝুঁকির কারণে পিছু হটতে হয়।

হামাস পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার দুই কর্মকর্তা যখন আহতদের উদ্ধারে ইউরোপিয়ান হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন ইসরায়েলি ড্রোনের আরেকটি হামলায় তারা দু'জনই গুরুতর আহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এই হামলাকে 'মানবিক আইন লঙ্ঘন' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় আহতদের মধ্যে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকও রয়েছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা কেবল সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। তবে গাজা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, হাসপাতালের ধ্বংসাবশেষ থেকে আহত শিশু ও নারীদের বের করে আনা হচ্ছে।

ইউরোপিয়ান হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "এটা সম্পূর্ণ মানবিক বিপর্যয়। আমাদের হাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। আহতদের অনেককে মাটিতে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।"