
শৈলকূপা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহ জেলায় নারীদেরকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর মূলহোতা দুই নারী ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। শুক্রবার রাতে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশ। গ্রেফতার কৃতরা হলো- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য জাহানারা বেগম, মহারাজপুর ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য নুরজাহান, রুহানি আক্তার ও আজিম মন্ডল।
জানা যায়, জাহানারা বেগম নলডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে ৩ বার মহিলা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং নুরজাহান বেগম ২ বার মহারাজপুর ইউনিয়ন থেকে মহিলা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগেও নারীদের দেহ ব্যবসার দালালীর অভিযোগে এই দুইজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও জামিন নিয়ে আবারও ব্যবসা শুরু করে। এছাড়াও খদ্দেরদের অশ্লীল ছবি মোবাইল ফোনে ধারন করে এবং ধারনকৃত ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইলও করতো তারা।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, জাহানারা ও নুরজাহান মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন শিক্ষা দেয়ার নামে ঘুরে বেড়ান এবং কুরআন শিক্ষার মক্তব্যও চালু রাখেন। যার কারণে এলাকায় তাদের ব্যাপক সুনাম আছে। কিন্তু এর আড়ালে অসহায় নারীদের ফুসলিয়ে দেহ ব্যবসার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।
ডিবি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জের নারী-পুরুষের একটি চক্র বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় নিয়ে নারীদের দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে অশ্লীল ছবি ধারণ করে রাখে। পরে তাদেরকে ব্লাকমেইলিং করে অর্থ আদায় করে আসছে বলে অভিযোগ আসছিল। সম্প্রতি রুহানি আক্তার শিলা নামে মেয়েকে দিয়ে ভুক্তভুগী হারুনর রশীদকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুলফাডাঙ্গা গ্রামের মহারাজপুর ইউনিয়নের ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নুর নেহার বসত বাড়ীতে ডেকে নেয়। এসময় গ্রেপ্তারকৃতরা ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে অশ্লীল ছবি মোবাইল ফোনে ধারন করে এবং ধারনকৃত ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ভুক্তভোগি হারুনর রশীদ বাদি হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে ঝিনাইদহ জেলার গোয়েন্দা শাখার একটি দল শুক্রবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সদস্য হওয়ার সুবাদে জাহানারা বেগম ও নুরজাহান নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বেকার যুবতীদের ভালো বেতনের লোভ দেখিয়ে দেহ ব্যবসার জন্য উদ্বুদ্ধ করে বেড়াত। ইউপি সদস্য হওয়ার সূত্র ধরে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন অসহায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যান। বাড়িতে যেয়ে মানুষের কখনও অভাবের সুযোগ নিয়ে, আবার কখনও ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে দেহ ব্যবসায় লাগান। গ্রেফতারের সময় তাদের নিকট থেকে ৫৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জের নারী-পুরুষের একটি চক্র বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে বাসাতে নিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে অশ্লীল ছবি ধারণ করে রাখে। পরে তাদেরকে ব্লাকমেইলিং করে অর্থ আদায় করে আসছিল।