
চুরি যাওয়া গরু উদ্ধারের পর থানায় জব্দ করে রাখার ঘটনায় চরম অবহেলার শিকার হয়েছে ১৬টি গরু। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে খাদ্য ও পরিচর্যার অভাবেই ৩টি গরু মারা গেছে। গরুর মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে তারা বারবার গরুগুলো ফেরত চেয়েছেন, কিন্তু তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারায় গরুগুলোকে পর্যাপ্ত খাবার ও যত্ন দেওয়া হয়নি, যার ফলে ৩টি গাভী মারা যায়।
গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একত্রিত হয়ে গরুর মালিকরা জীবিত গরুগুলো দ্রুত ফেরত চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেই সঙ্গে মৃত গরুগুলোর ক্ষতিপূরণও দাবি করেন তারা। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি ১৬টি গরু উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন থানায় হস্তান্তর করে। সদর থানা পুলিশ গরুর প্রকৃত মালিক চিহ্নিত করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন মালিকানা যাচাইয়ের। সেই সঙ্গে গরুগুলোর দেখভালের জন্য একজন লোক নিয়োগের নির্দেশ দেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনজন মালিকের নাম নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রকৃত মালিকদের মধ্যে রয়েছেন ঘোষপাড়ার মহাদেব চন্দ্র ঘোষ, মৃত ইলিয়াসের ছেলে নজরুল ইসলাম ও সরকারপাড়ার বাবুল। আদালতের নির্দেশনার পরও পুলিশ গরুগুলো ফেরত দিতে গড়িমসি করতে থাকে। অভিযোগ উঠেছে, এসআই নুর জামাল গরুর মালিকদের কাছ থেকে উৎকোচ দাবি করেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় গরু ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হয়।
এদিকে গরুর মালিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে থানায় আটকে রেখে গরুগুলোকে না খাইয়ে ফেলে রাখা হয়। ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একে একে তিনটি গরু মারা যায়। মারা যাওয়া গরুগুলোর বাজারমূল্য প্রায় সাত লাখ টাকা বলে দাবি করেছেন মালিকরা। জীবিত গরুগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন তারা।
গরুর মালিক সাবিনা খাতুন বলেন, তার একমাত্র বিদেশি জাতের গাভীটি প্রতিদিন ১৮-২০ লিটার দুধ দিতো। সেই গাভীটিই থানায় নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখা হয়। তিনি আরও বলেন, "আমার স্বামী অসুস্থ, দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এই গাভীর দুধ বিক্রির টাকাতেই চলত। কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেল। পুলিশ আমাদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাবি করেছিল, যা দিতে না পারায় গরুটি মারা গেছে।"
শুধু সাবিনা খাতুন নন, শহরের সরকারপাড়ার বাসিন্দা বাবলু জানান, তার পরিবারের ৫টি গরু পুলিশ হেফাজতে ছিল, এর মধ্যে ১টি মারা গেছে। ঘোষপাড়ার মহাদেব চন্দ্র ঘোষ জানান, তার ১০টি গরুর মধ্যে ২টি মারা গেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।
এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হন সাংবাদিকরা। সদর থানার ওসি সহিদুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিথুন সরকার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং দ্রুত গরুর মালিকদের গরুগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং গরুগুলো মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের অবহেলার কারণে গরুগুলো মারা গেছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।