Date: June 07, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রবাদের উত্থানের আশঙ্কা: প্রতিরোধের পথ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রবাদের উত্থানের আশঙ্কা: প্রতিরোধের পথ

June 06, 2025 07:09:24 PM   অনলাইন ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রবাদের উত্থানের আশঙ্কা: প্রতিরোধের পথ

ওবায়দুল হক বাদল:
দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে যুদ্ধের কালো মেঘ ঘনিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মানচিত্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বহুমাত্রিক সংকটের জাল, যেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠী আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দী হয়ে পড়েছে। ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের পর দক্ষিণ এশিয়াই হয়ে উঠতে পারে আঞ্চলিক ও পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর নতুন কুরুক্ষেত্র, যেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষই হবে প্রধান ইন্ধন।

বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সরকারের ভূমিকা:
বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠীকে কেবল শক্তি দিয়ে দমন করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এটি ছিল তার মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ একটি ভ্রান্ত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি; এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় অনুভূতি। তাই ধর্মীয় মতবাদগত সন্ত্রাস কেবল শক্তি দিয়ে নির্মূল করা সম্ভব নয়। সেই চেষ্টা করতে গেলে এসব দলের সদস্যদের ঈমানী চেতনা বৃদ্ধি পায়। এই সরল সত্যটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন তারা পশ্চিমাদের অনুসরণ করে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছেন, রিমান্ডে নির্যাতন করেছেন, জেল ও ফাঁসি দিয়েছেন। কিন্তু এর পাশাপাশি, উগ্রপন্থার অসারতা তুলে ধরে একটি শক্তিশালী কাউন্টার ন্যারেটিভ গড়ে তোলা এবং জেহাদের সঠিক ব্যাখ্যা জাতির সামনে উপস্থাপন করা ছিল অত্যন্ত জরুরি-- যা তারা করেননি।  এখানে প্রয়োজন ছিল আদর্শিক লড়াইয়ের, যা দেশের মানুষকে ধর্মীয় উন্মাদনা, হুজুগ-গুজব এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলত। এই আদর্শিক প্রতিরোধ গড়ে না তোলার ফলে, তাদের সরকারের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিগত নয় মাসে সেই ধর্মীয় উগ্রপন্থীরাই বাংলাদেশকে উগ্রবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশের সামাজিক অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা:
এদেশে এখন ধর্মীয় ও সামাজিক অসহিষ্ণুতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যে কোনো সময় যে কেউ নৃশংস গণহিংস্রতা বা মবের শিকার হচ্ছে। তওহীদী জনতা, ছাত্রজনতা ইত্যাদি বহু নামে এই মবগুলো সৃষ্টি করা হচ্ছে। নারীর ওপর সহিংসতা চলছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হচ্ছে। এছাড়া বইমেলায় হামলা, বৈশাখী মঞ্চ ভাঙচুর এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। ধর্মীয় ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। গত কয়েক মাসে অসংখ্য মাজার ভাঙচুর করা হয়েছে। এক কথায় বাংলাদেশের সর্বত্র একটি ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যা ক্রমশই বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ভারতের ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা:
এ তো গেল বাংলাদেশের অবস্থা। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ইসলামবিদ্বেষ প্রকট আকার ধারণ করছে। বিজেপি সরকারের আমলে মুসলিমদের অধিকার সীমিত করার জন্য বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনসহ (ঈঅঅ) নানা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা মুসলিমদের রাষ্ট্রহীন বানিয়ে ফেলার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা এবং বিচারহীনতার ঘটনা তো অহরহ ঘটে চলেছে। ভারতের সরকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করছে, যেমন বিতর্কিত ওয়াক্ফ (সংশোধন) আইন, যা মুসলিমদের সম্পত্তি ও অধিকার হরণে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তুমুল ইসলামবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত রয়েছে।

সম্প্রতি (২২ এপ্রিল) কাশ্মিরের পেহেলগামের একটি পর্যটন স্পটে হামলা চালিয়ে ইসলামি উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা বেছে বেছে অমুসলিম অর্থাৎ ২৪ জন হিন্দু ১ জন খ্রিষ্টান ও ১ জন নেপালী নাগরিককে হত্যা করেছে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে, সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে চলছে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, সীমান্তে গোলাগুলিও অব্যাহত রয়েছে। যে কোনো সময় পরিস্থিতি যুদ্ধে গড়াতে পারে।

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতি ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
আর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতি বর্তমানে তুঙ্গে। এর প্রধান কারণ ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে ‘অতিথি’ হিসাবে অবস্থান করছেন। বিষয়টি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে দিল্লির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে এবং বিশেষ করে মৌলবাদী গোষ্ঠীটি ভারতকে হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরে ভারতের বিরুদ্ধে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ এর ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইসকনের উচ্চপদস্থ নেতা স্বামী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের ঘটনা এই আগুনে ঘি ঢেলেছে। তার গ্রেফতারের পর চট্টগ্রামে তার সমর্থকদের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা দেশের রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে তীব্র করেছে।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া:
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদের প্রসার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড যার অধীনে ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে, তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামী উগ্রবাদের প্রসার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমেও বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কারো কারো মতে বাংলাদেশই হচ্ছে পরবর্তী আফগানিস্তান (ওয়াশিংটন এক্সামিনার)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বসার আগে থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মাধ্যমে এক প্রকার বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

মিয়ানমার-আরাকান সংকট ও বাংলাদেশ:
এদিকে মায়ানমারের সঙ্গেও বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েন আরম্ভ হয়েছে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সরকারকে মায়ানমারের আরাকান আর্মির সাথে সংলাপে বসার পরামর্শ দেন। এরপর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে আদিবাসীদের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে এবং সেখানে তাদের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই ঘটনায় অনেকেই মনে করছেন যে, বাংলাদেশের সীমান্ত মোটেও সুরক্ষিত নেই। এছাড়া, কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে যে, আরাকান আর্মি খুব শিগগিরই মায়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে, এবং সেই যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের ল্যান্ড এবং আর্মি ব্যবহার করে সহায়তা পাঠাতে পারে। ইতোমধ্যেই মায়ানমার সরকার বাংলাদেশের কাছে লিখিত চিঠিতে জানতে চেয়েছে কেন বাংলাদেশ সরকার আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ করছে। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের অনুরোধে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে একটি মানবিক করিডোর (প্যাসেজ) তৈরিতে সম্মতি দিয়েছে। ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ‘জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী রাখাইনে খাদ্য ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দিতে এই করিডোর প্রদান করা হবে।’ কথিত ‘মানবিক সহায়তার’ জন্য প্যাসেজ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যত একটি প্রক্সিওয়ারের (ছায়াযুদ্ধের) মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রোহিঙ্গা সংকট ও জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয়তা:
এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর মধ্যে আল-ইয়াকিন, আরসা (আরাকান সশস্ত্র বাহিনী) সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কর্ম-সমর্থক রয়েছে যারা এখন রাখাইন দখল করে নেওয়া আরাকান আর্মির পক্ষে সংগঠিত হচ্ছে। উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে অন্তত ১২-১৪টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অস্তিত্বের খবর পাওয়া যায় যারা ইয়াবা ও সোনার ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে এবং তাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্রও আছে। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানসহ কিছু মুসলিম দেশ থেকেও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থনের পাশাপাশি উগ্রবাদী মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বড় যুদ্ধের পটভূমি ও উগ্রবাদের ইতিহাস:
আসলে এখন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বড় যুদ্ধের পটভূমি রচিত হচ্ছে যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার সবাই জড়িয়ে পড়তে পারে। ইসলামী উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে এখানে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্বমঞ্চে এই উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর আবির্ভাব ঘটে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসাবে। সেই যুদ্ধ প্রায় দশ বছর পর্যন্ত চলেছিল। এই যুদ্ধে আফগান প্রতিরোধকারীরা যারা অনেকেই ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ছিল, তারা সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। এই প্রেক্ষাপটে তালেবান, আল কায়েদাসহ বিভিন্ন ইসলামি গোষ্ঠী গড়ে ওঠে, যারা পরবর্তীতে আফগানিস্তানে এবং আশপাশের অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে। ২০০১ সালের টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে, যা ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া: সংঘাতের বিস্তার:
এরপর ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগে আগ্রাসন চালানো হয়। এভাবে তারা দেশটিকে ধ্বংস্তূপে পরিণত করে, হত্যা করে অন্তত দশ লক্ষ বেসামরিক মানুষ। এরপর ২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়, যা দ্রুত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এই গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার সরকার ও বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলার সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শক্তি বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন প্রদান করে। রাশিয়া ২০১৫ সাল থেকে সরাসরি সামরিক অভিযান চালিয়ে আসাদ সরকারের অবস্থান শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এই বহুমাত্রিক আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ সিরিয়ার সংঘাতকে আরও জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী করেছে, যার ফলে প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশটির অর্থনীতি ও অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এই সংঘাতে জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী, বিভিন্ন ইসলামি বিদ্রোহী সংগঠন এবং উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেমন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। আইএস সিরিয়ার কিছু অংশে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং সেখানে তাদের উগ্র আদর্শ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছড়িয়েছিল।

গাজা সংকট ও পশ্চিমা পরাশক্তির ভূমিকা:
এই মুহূর্তে গাজা ধ্বংস করা হচ্ছে, হাজার হাজার শিশু ও নারী নিহত হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব নির্লজ্জের মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর মানবতার বুলি আউড়াচ্ছে। এই সব হামলার পেছনে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে, তাদের যোগসূত্র খুঁজে বের করা হচ্ছে। বস্তুত পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো কখনো কখনো নিজেদের কূটনৈতিক ও সামরিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে ব্যবহার বা অর্থায়ন করে থাকে। পরে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে। তাদের মূল লক্ষ্যই থাকে যুদ্ধ বাধিয়ে সেখানে অস্ত্রবাণিজ্য করা। তারই ধারাবাহিকতায় এখন দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তাদের প্রভাব বিস্তার এবং চীন ও রাশিয়ার প্রভাব কমানোর জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এ অঞ্চলে জটিলতা বাড়াচ্ছে এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা:
বাংলাদেশের সতেরো কোটি মানুষ যদি বসে বসে এই পরিস্থিতি দেখতে থাকে তাহলে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমিকে অস্ত্রব্যবসায়ী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কুরুক্ষেত্রে পরিণত করবে। এটা যেন না করতে পারে, তাই এখনও সময় আছে সতর্ক হওয়ার। এখানে যেন কেউ কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াতে না পারে, ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে উগ্রবাদ ও অপরাজনীতির বিস্তার ঘটাতে না পারে সেজন্য ইসলামের সঠিক আকিদা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। জেহাদ, গাজওয়াতুল হিন্দ ইত্যাদি বিষয়ের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে একটি আদর্শিক লড়াই পরিচালনা করতে হবে। জেহাদ ও সন্ত্রাসের পার্থক্য সকলের সামনে পরিষ্কার করতে হবে। সতেরো কোটি মানুষকে সকল দল-মত, ফেরকা-মাজহাব ভুলে এক স্রষ্টা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একজন নেতার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলাই এখন আমাদের দেশ ও জাতিকে রক্ষার একমাত্র উপায়। ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে আমাদেরকেও ইরাক সিরিয়া আফগানিস্তানের পরিণতি বরণ করে নিতে হবে। [লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট; যোগাযোগ: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৬২১৪৩৪২১৩, ০১৭১১২৩০৯৭৫]