
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অসময়ে পদ্মা নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা। দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। ভুক্তভোগীদের দাবি, পদ্মার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।
অসময়ে, অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমেও প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীভাঙন শুরু হওয়ায় প্রতিদিনই শত শত বিঘা ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি, ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে শেষ সম্বলটুকু হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।
তবে ভাঙন রোধে হাটখোলাপাড়া থেকে ভূরকা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দুটি প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৩৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান।
এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে নদীতে নতুন পানি এলে পদ্মার আগ্রাসী রূপ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। এক কিলোমিটার অংশের ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেওয়ায় তারা খুশি হলেও বাকি ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন নিয়ে রয়েছে চরম উদ্বেগ। তাদের দাবি, পুরো এলাকায় সাময়িকভাবে জিওব্যাগ ফেলার পাশাপাশি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ধরে চলা ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে তাদের হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর পাড় থেকে মাত্র ৩০ মিটার দূরে থাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি।
পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "একসময় আমাদের বাড়ি থেকে আবাদি জমিতে যেতে ৫ কিলোমিটার হাঁটতে হতো। এখন নদীর পাড়ে যেতে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট।" তিনি আরও বলেন, "চোখের সামনে পদ্মার ভাঙনে চাষের জমি হারিয়ে ফেলেছি। দ্রুত টেকসই ব্যবস্থা না নিলে এবার বসতভিটাও হারাতে হবে।"
স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজ মণ্ডল বলেন, “আমাদের এলাকার ৪ কিলোমিটারজুড়ে পদ্মা নদীর ভাঙন চলছে। এর মধ্যে ১ কিলোমিটারে জিওব্যাগ ফেলা হলেও বাকি ৩ কিলোমিটারে এখনই ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন বন্যায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পড়তে পারে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, "আমরা এক কিলোমিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। বাকি ৩ কিলোমিটারের জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ নিয়েও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে।"
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, "যেসব জায়গায় মারাত্মক ভাঙন হচ্ছে, সেখানে জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে নদীভাঙনপ্রবণ ১১.৩০ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।"
ভুক্তভোগীদের দাবি, শুধু আশ্বাস নয় -এই কৃষিনির্ভর অঞ্চলকে রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করলেই ফিরবে স্বস্তি সবার মাঝে।