
নালিতাবাড়ী সংবাদদাতা, শেরপুর:
নীরবেই চলে গেলেন শেরপুরে নালিতাবাড়ীতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বাসিন্দা শহীদ জায়া বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধা করফুলি বেওয়া (৭৮)। ২০ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই বীর নারী ইন্তেকাল করেছেন।(ইন্নালিল্লাহি......রাজেউন)।
করফুলি বেওয়া সোহাগপুর বিধবাপল্লীর শহীদ রহিম উদ্দিনের স্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই সকালে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় নালিতাবাড়ীর কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের মানুষের ওপর তান্ডব চালায়। তাদের নির্বিচার গুলিবর্ষণ আর বেয়নেট চার্জে ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষ মানুষ শহীদ হয়। শহীদ রহিম উদ্দিন ছিলেন তাদেরই একজন। পাক হানাদারদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন শহীদ পরিবারের আরও ১২ গৃহবধু। পরে সরকার তাদেরকে বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদান করে।
ওই দিন বাড়ীর ওঠোনে নিজের চোখের সামনেই স্বামী রহিম উদ্দিনকে উপর্যুপুরি গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদাররা। বিভৎসতার পর পাক বাহিনীর লোকজন তার বাড়ী ছেড়ে অন্যবাড়ীর দিকে ছুটলে কোনমতে স্বামী রহিম উদ্দিনের লাশটি টেনে গোয়ালঘরে রেখে সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যান। এরপর দুর্বিসহ দিন কাটতে থাকে। পরবর্তীতে সোহাগপুর বিধবাপল্লী শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতি গড়ে ওঠে । যাঁরা ২৫ জুলাইকে সোহাগপুর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। দীর্ঘদিন তিঁনি সোহাগপুর বিধবাপল্লী শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সোহাগপুর গণহত্যার সময়কালে ৬৭ জন নারী স্বামী-সন্তান হারিয়ে বিধবা হয়। তাদের মধ্যে একে, এক সবাই এখন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে হতে বেঁচে ছিলেন ২০ জন। তাদের মধ্যেও আজ চলে গেলেন আরও একজন। উল্লেখ্য, সোহাগপুর বিধবাপল্লীর ওই গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়েত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সোহাগপুর বিধবাপল্লী এক বড় ট্রাজেডি’র স্থান দখল করে আছে। আর করফুলি বেওয়া ছিলেন তার জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। তাঁর মৃত্যুতে সোহাগপুর বিধবাপল্লী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারকদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি হয়েছে। জয়তু করফুলি বেওয়া।