
ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ৯০ শতাংশ মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার কাজ করছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এই জেলার প্রায় সব এলাকা টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভি-স্যাট ব্যবহারসহ বিকল্প উপায়ে প্রচেষ্টা চালানোর পরও মোবাইল টাওয়ারগুলো সচল করতে পারেনি।
বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ভয়াবহ বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ১২ জেলায় মোবাইল টাওয়ার বা সাইট অচল হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। জেলাগুলো হলো—ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও রাঙামাটি।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার তথ্যানুযায়ী, বন্যায় দেশের ১২টি জেলার এক হাজার ৮০৭টি মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতের রিপোর্ট অনুযায়ী ১২ জেলায় দুই হাজার ২৫টি মোবাইল টাওয়ার অচলের তথ্য জানিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। সেই হিসাবে বিশেষ ব্যবস্থায় ২১৭টি টাওয়ার সচল করা সম্ভব হয়েছে।
বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, ফেনীতে থাকা ৬৫৬টি মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে ৫৯০টি অচল। সচল আছে মাত্র ৬৬টি। সেগুলোও কতক্ষণ সচল রাখা সম্ভব, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন অপারেটররা।
বিটিআরসির সব শেষ তথ্য মতে, নোয়াখালীতে ৩৮০টি, কুমিল্লায় ৫৩৩টি, লক্ষ্মীপুরে ৫৪টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৩টি, চাঁদপুরে ৪৭টি, চট্টগ্রামে ৭৫টি, খাগড়াছড়িতে ৩৬টি, মৌলভীবাজারে ৩৯টি, সুনামগঞ্জে ১১টি, রাঙামাটিতে ১৭টি এবং হবিগঞ্জে দুটি মোবাইল টাওয়ার বর্তমানে অচল।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১০টি ভি-স্যাট প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে পাঁচটি ফেনী জেলার প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে। ভি-স্যাটগুলো ব্যবহার করে টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিকে বন্যার মধ্যে টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে বিটিআরসি।
সংস্থাটি বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৫ জনের ইমার্জেন্সি রেসপন্স দল গঠন করা হয়েছে। যারা দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিটিআরসির ইমার্জেন্সি রেসপন্স দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে +৮৮০২২২২২১৭১৫২ নম্বরে ফোন করতে হবে। বিটিআরসির কল সেন্টার ১০০ ব্যবহার করেও ওই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।
এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
নেটওয়ার্ক একবারে বিচ্ছিন্ন হলে ১০টি ভি-স্যাট প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই সব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ফ্রি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা জানান, দেশে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতিতে কয়েকটি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ড্যামেজ হওয়ার কারণে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেখানে জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পরও উপদ্রুত এলাকার ১৩ শতাংশ সাইট ডাউন হয়ে আছে।