Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / খেলাধুলা / বাঘের থাবায় পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

বাঘের থাবায় পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’

September 03, 2024 06:37:50 PM   অনলাইন ডেস্ক
বাঘের থাবায় পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’

রাওয়ালপিন্ডিতে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাসে সিরিজের পঞ্চম দিনে খেলা শুরু নিয়েই ছিল শঙ্কা। তবে পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের বরাত দিয়ে কিংবদন্তি ক্রিকেটার রমিজ রাজা জানিয়েছিলেন, ‘খেলা হবে’। এই খবরে বাংলাদেশও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের। শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। বোলারদের অগ্নিঝরা পারফরম্যান্সের পর ব্যাটারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পেয়েছে ৬ উইকেটের দারুণ এক জয়।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট মানেই বাংলাদেশের স্মৃতিতে উঠে আসে মুলতান টেস্টের সেই দুঃসহ হার। দীর্ঘদিন পর সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ দেয় রাওয়ালপিন্ডির প্রথম টেস্ট। ১০ উইকেটের বিশাল জয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ পেয়েছিল পাকিস্তানকে টেস্টে হারানোর স্বাদ। এবার দ্বিতীয় টেস্টেও এলো অসাধারণ জয়। দিনের শুরুতে দুই উইকেট হারালেও নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ১৮৫ রানের লক্ষ্যে।

চতুর্থ দিনে পেসারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর জয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শেষ দিনে টাইগার ব্যাটারদের ধৈর্য্য আর ‘কমিটমেন্ট’-এর সুবাদে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে করল ধবলধোলাই। আবরার আহমেদের বলে চার মেরে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তান ঘরের মাঠে নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার এমন লজ্জার শিকার হলো। এর আগে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তান।

পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪৩ রান। আগের দিনের ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে এদিন আরও ১৪ রান যোগ করেন দুই ওপেনার। ১০ ওভারেই পার হয় দলীয় ৫০। এরপর আসে কিছু বিপত্তি। মীর হামজার বলে ব্যক্তিগত ৪০ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন জাকির। জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি আরেক ওপেনার সাদমান। খুররমের বলে মিডঅফে আলতো শট খেলতে গিয়ে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।

দুই উইকেট পতনের পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক খেলেন নিখুঁত টেস্ট ইনিংস। ভেজা আউটফিল্ডের কারণে শুরুতে খানিকটা সংগ্রাম করতে হলেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের ফিরে পায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক ও বর্তমান এই দুই অধিনায়ক। ২০ ওভারে দুজন মিলে যোগ করেন ৫৭ রান। ততক্ষণে ম্যাচটা পাকিস্তানের নাগালের বাইরে চলে যায়।

মধ্যাহ্নভোজের পর শান্ত বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩৮ রান করে সালমান আঘার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৮ রান।

শান্তর পর মুমিনুলও দ্রুত ফিরে যান। তবে এরপর আর কোনো বিপত্তি ঘটেনি। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব ও মুশফিক বাংলাদেশকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। এ জুটি যেন জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন।

সবাই মিলে বাংলাদেশ পেল ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিদেশে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্মৃতি ছিল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো পাকিস্তানের নাম।

গতকালই মূলত জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সারাদিন পেসাররা ঝরিয়েছেন আগুন। নাহিদ রানার গতির সামনে অসহায় হয়ে পড়ে পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডার। সঙ্গ দেন হাসান মাহমুদ। এ দুজন নেন প্রতিপক্ষের ৯ উইকেট। ১৭২ রানে পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে গেলে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ১৮৫ রান।

এর আগে, লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম ইনিংসে ১৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ড জুটি টাইগারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ রানের আগেই ৬ উইকেট হারানোর পর ৭ম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটি এর আগে কেউ করতে পারেনি। লিটন পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ২৬২ রান।

১২ রানে পিছিয়ে থাকলেও ম্যাচে ফিরতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। গ্যালারিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল সিরিজের শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত সিরিজ শেষে উঁচুতেই থাকল লাল-সবুজের সেই পতাকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ইনিংস: ২৭৪/১৭২
বাংলাদেশ ইনিংস: ২৬২/১৮৫
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী। সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন কুমার দাস।
ম্যান অব দা সিরিজ: মেহেদী হাসান মিরাজ।