
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে একাধিক অস্তিত্বহীন উন্নয়ন প্রকল্পের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রংপুর সমন্বিত দুদকের তিন সদস্যের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
দুদক টিমের সদস্যরা ছিলেন উপ-সহকারী পরিচালক জয়ন্ত সাহা, সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রায়হান বকশী। অভিযানের সময় অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম। উপস্থিত কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা চারটি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় অনিয়ম ধরা পড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের উড়িয়া ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গণপাঠাগার উন্নয়ন প্রকল্পে। বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কিন্তু প্রকল্প এলাকায় কোনো পাঠাগারের অস্তিত্ব মেলেনি- শুধু ছিল একটি আধাপাকা নামাজ ঘর।
একই ইউনিয়নের হাওয়া ভবন একতা যুব সংঘ নামে একটি সংগঠনের ঘর নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ টাকা (২০২১-২২ অর্থবছর)। সংঘ কর্তৃপক্ষ জানান, তারা ঘরটি নিজেদের অর্থেই নির্মাণ করেছেন, সরকারি বরাদ্দের কোনো প্রয়োগ হয়নি।
উদাখালী ইউনিয়নের কাঠুর (নিলের ভিটা) কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে যাত্রী ছাউনি প্রকল্পে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও, বাস্তবে সেখানে দেখা যায় ছয়টি খুঁটির উপর একটি টিনের ছাউনি—কোনো বেড়া বা বসার ব্যবস্থা নেই। দুদক কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রকৃত খরচ ১৫-২০ হাজার টাকার বেশি না।
দুদকের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রায়হান বকশী দৈনিক দেশের পত্রকে বলেন, “ঢাকা থেকে নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি প্রকল্পে সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ ছিল। মাঠে গিয়ে কিছু প্রকল্পের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি, আবার কিছুতে স্পষ্ট দুর্নীতির আলামত পেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “ঘুরে দেখা চারটি প্রকল্পেই অসংগতি রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। প্রয়োজনে অনুসন্ধান কিংবা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার টাকার বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। কিন্তু বাস্তবায়নের নামে দুর্নীতির অভিযোগে মাঠে নামে দুদক।