
তৌফিকুর ইসলাম:
বরগুনার আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও দ্বন্দ্বে হাতাহাতিতে অধ্যক্ষসহ উভয় পক্ষের তিন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ১০টার দিকে কলেজের সম্মুখে মানববন্ধন করার সময় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই কলেজের সভাপতি ও জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুর অনুসারী ও অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যক্ষ পদ নিয়ে গ্রুপিং চলে আসছিল। সভাপতিপন্থী শিক্ষকরা কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণ করে শিক্ষক ফেরদৌসি আক্তারকে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। আর অপরদিকে অধ্যক্ষপন্থীরা বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল।
বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষের অপসারণ ও বেতন ভাতার-দাবীতে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনুসারী শিক্ষক-কর্মচারীরা মানববন্ধন করতে চাইলে ওই কলেজের অধ্যক্ষপন্থী শিক্ষকরা এতে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে সভাপতিপন্থী শিক্ষক মো. জয়নুল আবেদীন, হোসাইন আলী কাজী, ফেরদৌসি আক্তার, মজিবুর রহমান, বশির আহম্মেদ, অলি আহম্মেদসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী এবং অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়াসহ তার অনুসারী শিক্ষক মো. বাছির উদ্দিন, মো. কবির হোসেন, মো. মাকসুদুর রহমান, মো. আব্দুল জলিলসহ শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অধ্যক্ষসহ উভয় পক্ষের তিন আহত হয়। আহতরা হলেন অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়া, শিক্ষক মো. জয়নুল আবেদীর (কৃষি) ও নাইটগার্ট মো. বাবুল মিয়া।
অধ্যক্ষপন্থী শিক্ষকরা জানান, আমতলী বকুল নেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ পদ ও বেতন-ভাতাদি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং চলে আসছিল। এর আগেও এই বিরোধ দেশের সবোর্চ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় ওই কলেজের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে একটি জাল সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে। রায়ে মামলাটি ভিত্তিহীন হওয়ায় হাইকোর্ট মামলাটি স্থগিত করে দিয়ে বাদী মোঃ মজিবুর রহমান ভিত্তিহীন মামলা করায় তার উপর রুল জারি করে। এছাড়াও ২০২১ সালে অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়াকে বাদ দিয়ে ফেরদৌসি আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে সুপ্রীম কোর্টে একটি মোডিফিকেশন আপিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট শুনানী শেষে আপিলটি সরাসরি রিজেক্ট করে দেয়। এরপর থেকে মো. ফোরকান মিয়াই ওই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির অনুসারী ওই কলেজের কিছু শিক্ষক-কর্মচারীরা অধ্যক্ষের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে আসছে। সভাপতি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন শিটে স্বাক্ষর না করায় গত ৭ মাস পর্যন্ত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।
এদিকে অধ্যক্ষের উপরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, সভাপতির ভাইয়ের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তারকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বানানোর জন্য শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে বেতন সীটে প্রতিস্বাক্ষর না করে ও কলেজের মধ্যে বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি করছেন।
তার দাবি, শিক্ষক মো. জয়নুল আবেদীন, হোসাইন আলী কাজী, ও বশির আহমেদ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিয়মিত কলেজে ক্লাসে আসেন না। মাঝে মাঝে আসলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। তাদেরকে বারবার ক্লাস করা ও শিক্ষার পরিবেশ বজার রাখার জন্য অনুরোধ করলে তাহারা আমাকে উল্টো ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন। আজকে তাদের মাধ্যমেই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আজকে এরাই আমার উপর হামলা চালিয়ে আমাকে লাঞ্চিত করে। আমাকে মারধর করার সময় কলেজের নাইটগার্ট মো. বাবুল মিয়া এগিয়ে আসলে তাকেও তারা মারধর করে। বাবুল মিয়াকে মারধর করতে দেখতে পেয়ে বাবুলের ছেলে মো. মেহেদী তার বাবাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসলে তাকে মারধর করে বহিরাগত বলে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপরোক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর অশালীন উচ্চবাচ্য আচার-আচারণ, বেপরোয়া চলাফেরা কলেজে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করছে। আমাকে মারধর করতে দেখে কলেজের ছাত্রীরা ভয়ে ক্যাম্পাসে ছোটাছুটি করে ও ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে। আমি ওই ঘটনায় জড়িত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উচ্চমহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে ফেরদৌসি আক্তার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ ফোরকান জবরদখল করে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাঁর কারণে সাত মাস ধরে শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কাঙ্ক্ষিতা মণ্ডল তৃণা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আহত জয়নুল আবদিনের মুখমণ্ডল, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মেহেদীকে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’
বরগুনা পুলিশ সুপার আবদুস সালাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।