
ওবায়দুল হক বাদল:
রাজধানীর উত্তরায় হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে উন্মুক্ত ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা জেলা উত্তর শাখা হেযবুত তওহীদের আয়োজনে আজ শনিবার বিকাল ৪টায় উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইফতারপূর্ব আলোচনা সভা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজের পর হয় প্রশ্ন উত্তর পর্ব।
ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
এসময় তিনি সওমের নিয়ম, উদ্দেশ্য, শিক্ষা এবং দেশ ও সমগ্র বিশ^ জুড়ে বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি, মুসলমানদের দুর্দশা এবং এ থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, সওম শব্দের অর্থ আত্মসংযম, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, বিরত থাকা। রোযা তথা সওমের উদ্দেশ্য এই যে, মো’মেন ব্যক্তি সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন, নিজের আত্মাকে শক্তিশালী করবেন। তিনি অপচয় করবেন না, পশুর ন্যায় উদরপূর্তি করবেন না। তিনি হবেন নিয়ন্ত্রিত, আত্মত্যাগী। বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষের দুঃখ অনুভব করে তিনি তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবেন। আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবেন অর্থাৎ তিনি হবেন তাকওয়াবান। তার এই চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে। গড়ে উঠবে এমন এক সমাজ যেখানে সবাই একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে উৎসাহী হবে, বিরাজ করবে পরস্পর সহমর্মিতা, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব। প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা এই যে, বর্তমানে এই মৌলিক শিক্ষা হারিয়ে সওম বা রোযা যেন হয়ে গেছে কেবল ‘না খেয়ে থাকা’র নামান্তর। দেখা যায়, রমজান আসলেই মুসলিমদের মধ্যে হুলুস্থুল পড়ে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে ওঠে আকাশছোঁয়া। সংযমের মাস এলেই মুসলিমদের সংযমের সব বাঁধ যেন ভেঙে যায়। আজ সওমকে ব্যবসায়ের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। এ জাতীয় ধর্মব্যবসা ঢাকা দেয়ার জন্য আত্মপ্রচারের আশায় কিছু দান-খয়রাত করতে দেখা যায় মাত্র। সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ অর্থাৎ তাকওয়া সৃষ্টি হয়না।
আল্লাহ যেখানে কোরআনে বলেছেন, তাকওয়া সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই তিনি রোজাকে ফরজ করেছেন সেখানে এই উদ্দেশ্যই যখন বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তখন আল্লাহর কাছে আমাদের সারাদিন না খেয়ে থাকার মূল্য কতটুকু? আল্লাহর রসুল (স.) বলেছেন, “এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ সওম রাখবে কিন্তু সেটা হবে কেবল না খেয়ে থাকা (অর্থাৎ সওমের উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না)।” রসুলের (সা.) সেই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে।
মানুষের নফস ভোগবাদী, সে চায় দুনিয়ার সম্পদ ও ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করতে। পক্ষান্তরে রোজার শিক্ষা হচ্ছে ত্যাগ করা, সংযত থাকা, নিজের ভোগবাদী প্রবণতার মুখে লাগাম দেওয়া। মানবতার কল্যাণে কাজ করা, সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা হচ্ছে ত্যাগের বিষয়, যা ভোগের ঠিক উল্টো। এটা করতে নিজেদের জান ও মালকে উৎসর্গ করতে হয়। ত্যাগ করার জন্য চারিত্রিক শক্তি, মানসিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে। যেসব বৈশিষ্ট্য গুণাবলী সওম পালনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়।
উপস্থিত অতিথি ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, রোজার নির্দেশনাটা মূলত মো’মেনদের জন্য। তার মানে মো’মেনরা রোজা পালন করবে। তাহলে মো’মেন কারা? তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও রাসুলের উপর ঈমান আনে, কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। এই মো’মেনের জন্যই হলে রোজা, নামাজ, হজ্ব সবকিছু। আমরা হেযবুত তওহীদ আমাদের জীবন ও সম্পদ আল্লার রাস্তায় কোরবান করে দিয়ে প্রকৃত মোমেন হবার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে- আজকে পৃথিবীময় ১৬০ কোটি মুসলিম। তাদের হাতে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ। তাদের নামাজ- রোজা ইত্যাদি আমলে কোনো ঘাটতি নেই। অথচ মুসলিম জাতি গত কয়েকশ বছর ধরে লাঞ্ছনাময় জীবনযাপন করছে। যাদের দায়িত্ব ছিল সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা তারা এখন সবচেয়ে বেশি অশান্তিতে নিপতিত। এই দুর্দশা ঘোচাতে হলে আজকের মুসলিম জাতিকে সর্বপ্রথম তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম তথা ন্যায়-সত্য আর হকের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যায়, অবিচার, মিথ্যা, দালালাতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জেহাদ অর্থাৎ আপ্রাণ প্রচেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ প্রকৃত মোমেন হতে হবে। রাজনৈতিক দল, ফেরকা, মাজহাব ইত্যাদি যাবতীয় অনৈক্য ঘুচিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়াময় শান্তি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর হেযবুত তওহীদ সেই ঐক্যের ডাকই দিয়ে যাচ্ছে।
উপস্থিত সকলকে আহ্বান করে তিনি বলেন, আসুন আমরা এই পবিত্র রমজান মাসের হক আদায় করি। পবিত্র রমজানে আমরা অঙ্গীকার করি- “আমরা আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য কারো হুকুম মানবো না, আমাদের জাতি হবে একটা, নেতা হবেন একজন, আমাদের জীবন চলবে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, আমরা হবো মো’মেন, ভাই ভাই। আমাদের সমাজ এমন হবে- যে সমাজের মানুষ রাতে দরজা খুলে ঘুমাবে, নারীদের সম্ভ্রমহানি, চুরি-ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, খুন, রাহাজানি, থাকবে না। কেউ উদরপূর্তি করে খাবে আর কেউ অনাহারে থাকবে এমন হবে না।”
সবশেষে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে এমন সমাজ গঠনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। এক্ষেত্রে হেযবুত তওহীদের কোনো অর্থনৈতিক স্বার্থ নেই, কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই। আমাদের বিষয়ে কোনো কুচক্রী মহলের দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়ে আমাদের কাছ থেকে জানুন আমরা কী বলি, কী করি, আমাদের কর্মসূচি কী, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের শিক্ষা উপলব্ধি করে সমাজে এর বাস্তবায়ন ঘটানোর তওফিক দান করুন বলেন হেযবুত তওহীদের এ নেতা।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে উপস্থিত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেযবুত তওহীদে এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উত্তরা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু। আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, হেযবুত তওহীদের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, মিরপুর শাখার সভাপতি আব্দুল হক বাবুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমেদ; কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান; কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের সদস্য রাকীব আল হাসান; ঢাকা জেলার সভাপতি ইউনুস মিয়া; হেযবুত তওহীদের মতিঝিল শাখার সভাপতি মো. মেজবাউল ইসলাম; সাভার শাখার সভাপতি সোহেল তালুকদার, আশুলিয়া শাখার সভাপতি জাকির হোসেন প্রমুখ।