Date: May 03, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রংপুর / আমি কাউকে মারিও নাই, মরতে দেখিও নাই, আমি কেন জেল খাটলাম! - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

আমি কাউকে মারিও নাই, মরতে দেখিও নাই, আমি কেন জেল খাটলাম!

January 30, 2025 05:30:48 PM   অনলাইন ডেস্ক
আমি কাউকে মারিও নাই, মরতে দেখিও নাই, আমি কেন জেল খাটলাম!

আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ আমার জীবন থেকে চলে গেল ১৬ বছর জেল জিবন যে কতটা ভয়াবহ তা আমি বুঝাতে পারব না। পিলখানা হত্যাকান্ডের দিন আমি পিলখানায় ছিলাম কিন্তু আমি কাউকে মারিও নাই, মরতে দেখিও নাই। আমি কেন জেল খাটলাম! ১৬ বছরের মধ্যে আমি বাড়ি আসতে পারি নাই মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন মারা গেছে দেখতে পারি নাই। দুঃখ নিয়ে কথা গুলো বলছেন পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিষ্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ১৬ বছর পর কারাগার থেকে সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া ল্যান্স কর্পোরাল ফজলুর রহমান।

ফজলুর রহমান কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠি গ্রামের মৃত শাহার আলীর সন্তান। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ৩য়। দেশ মাতৃকার সেবার ব্রত নিয়ে যোগ দেন তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর)। যৌবনের দিনগুলো কেটেছে দেশের সীমান্ত রক্ষায় চৌকশ সিপাহি হিসেবে। পরে তিনি সিপাহি থেকে ল্যান্স কর্পোরাল পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।


কর্মস্থল ছিল বিডিআর হেডকোয়ার্টার পিলখানায়। সেখানে থাকায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় ফেঁসে যান। বিষ্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা হয় তার নামে । প্রহসনের বিচারে ১৬ বছর কারাভোগ করে সদ্য জামিন পান তিনি।


কারাগারে থাকাকালীন মা-বাবা, বোনসহ ৯জন নিকট আত্মীয় হারিয়েছেন তিনি। এসব আত্মীয় মারা গেলেও এক নজর দেখা কিংবা জানাজায় অংশ নেয়ার সুযোগ হয়নি তার। কারাগারে দেখা করার তেমন সুযোগ মেলেনি পরিবারের সদস্যদের। এখন মুক্ত হলেও ফজলুর রহমান হয়ে পড়েছেন কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফজলুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও তার শারীরিক অবস্থা ও চাকুরী না থাকায় সামনের দিন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন স্ত্রী রাশেদা।

স্ত্রী রাশেদা বলেন, ১৬টি বছর সমাজের নানা সমালোচনা সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছি। নিজের সন্তান না থাকায় ননদের সন্তানকে নিয়ে মানুষ করেছি। ছোট থেকেই সেই মেয়ে তার বাবাকে (ফজলুর রহমান) খুঁজেছে, আমি কোন উত্তর দিতে পারি নাই। এখন স্বামী ফিরে আসলেও কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে।


এলাকাবাসী বলেন, ফজলুর রহমানের যখন থেকে জেল জিবন শুরু হয় তখন থেকেই অনেক কষ্ট করে তাঁর স্ত্রী এই সংসারটা চালাতো। আমরা সকলে জানি তিনি নির্দোষ তবুও তাকে জেল খাটতে হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন যদি না হতো এবং সরকার পরিবর্তন না হলে বিডিআর এর সকল সদস্যকে এভাবেই তিলে তিলে শেষ করে দিতো।

 

ফজলুর রহমান বলেন,এ মামলার সাথে কোন সংশ্লিষ্ঠতা ছিলো না বলে মুক্ত হয়েছেন তিনি। ১৬ বছরে বাবা- মা, বোন মারা গেছেন,২ ফুফু মারা গেছেন, জ্যাঠা-মামাসহ আরোও কয়েকজন নিকট আত্মীয় মারা গেছেন তাদেরও দেখতে পারি নাই। তাদের তো আর ফিরে পাব না। তাদের না দেখার কষ্ট নিয়েই থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার চাকুরীটাই ছিলো একমাত্র সম্বল । এখন তো চাকুরীটাও নেই। সরকারের কাছে দাবী আমাদের পূনর্বাসন করুক। সরকার চাইলে এটা করতে পারে। পূনর্বাসন হলে আমার আর চাওয়ার কিছু নাই।