
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তরুণ তানভীর রহমান রাহাত, যিনি অনলাইনে "Tanveer Evan Rahat' নামে পরিচিত। তিনি বর্তমানে একজন আইটি প্রশিক্ষক, ফ্রিল্যান্সিং বিশেষজ্ঞ এবং উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এসএসসি পরীক্ষার্থী হলেও তার যাত্রা এখানেই থেমে নেই। মফস্বলের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে তিনি নিজেকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গেছেন। তানভীরের সফর শুরু হয় আষ্টম শ্রেণিতে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা বা আড্ডার পরিবর্তে তার জগৎ ছিল কম্পিউটারের মধ্যে। ঘণ্টার পর ঘন্টা নতুন কিছু শিখে ভাবতেন, ডিজিটাল মাধ্যমে কীভাবে অন্যের উপকারে আসা যায়। তার আগ্রহকে পরিবারের কেউ তখন বুঝতে পারেননি। সবাই তাকে 'ল্যাপটপে মুখ গুঁজে থাকা অলস ছেলে' মনে করতেন। পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ আসত, কিন্তু তানভীর জানতেন, তিনি অন্য কিছু করতে চান। তিনি চুপচাপ নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন এবং রাতের নিস্তব্ধতায় ইউটিউব, ব্লগ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট থেকে একাই শেখার যাত্রা শুরু করেন।
তানভীরের জীবনে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে, যখন তার মা তাকে হতাশ হয়ে বলেছিলেন, "তুই আমাকে এক থেকে দশ রোলের ছাত্রের মা বানাতে পারলি না।" এই কথাটি তানভীরের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সেদিন উত্তর না দিলেও, তার মনে এক ধরনের জেদ গড়ে ওঠে- তিনি জিততে চান, তবে অন্যভাবে। তাকে এমন কিছু করতে হবে, যাতে তার মা গর্ববোধ করেন। সেই রাত থেকে তার শেখা ও গবেষণায় নতুন উদ্যম যোগ হয় এবং তিনি ঠিক করেন যে, জীবনে আলাদা কিছু করবেন। পড়াশোনায় প্রথম সারিতে না থাকলেও, তানভীর বর্তমানে দেশি-বিদেশি ক্লায়েন্টদের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি, ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং এবং এসইও সার্ভিসকে শীর্ষস্থানে নিয়ে আসার কাজ করছেন। তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা লাভ করেছেন এবং সেখান থেকে উপার্জন করছেন। প্রতিটি সফল প্রজেক্টের পর, তিনি প্রথম ফোনটি করেন মাকে, তার সাফল্যের কথা জানান। মায়ের মুখে হাসি এবং আশীর্বাদ- "তুই ঠিক পথেই আছিস বাবা, তুইই আমার গর্ব তার এগিয়ে চলার শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। শুধু নিজের উপার্জন নয়, তিনি বর্তমানে একটি স্বনামধন্য আইটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। প্রতি ব্যাচে ৩০০-এর বেশি শিক্ষার্থীকে তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখান।
স্বপ্ন যখন আকাশ ছোঁয়া। তানভীরের স্বপ্ন এখানেই শেষ নয়। তিনি শীঘ্রই তার নিজস্ব ডিজিটাল সার্ভিস এজেন্সি নেক্সা ফোর্জ চালু করতে যাচ্ছেন। এটি শুধু একটি এজেন্সি নয়, বরং তরুণদের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির মিশন। তার লক্ষ্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে তরুণরা মার্কেটপ্লেসের বাইরে থেকেও ক্লায়েন্ট খুঁজে নিজেদের অবস্থান তৈরির বাস্তবসম্মত পথ শিখবে। তিনি চান, তরুণরা যেন তাদের আত্মত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগগুলো গ্রহণ করে।
তানভীরের গল্পটি সেইসব তরুণদের জন্য, যারা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বা পরিবারের অজ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে চান। তার যাত্রার শুরুতে অনেকেই তার সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তবে তানভীর কখনো হতাশ হননি। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে, তিনি নীরবে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। নিজেকে এখনো পুরোপুরি সফল না ভাবলেও, তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই অবস্থানে আসাটাই তার বড় প্রাপ্তি। তিনি তার সংগ্রামকে সার্থক মনে করেন, যদি তার গল্প একজন তরুণকেও অনুপ্রাণিত করতে পারে।