
৮ই মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি আমরা উদযাপন করতাম গর্বের সঙ্গে, নারীর অর্জন ও অধিকারকে সম্মান জানিয়ে। কিন্তু এবার এই দিনটি সামনে আসতেই মনে হচ্ছে উদযাপনের চেয়ে, শঙ্কার কথাই বেশি ভাবতে হচ্ছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নারী নিরাপত্তার চিত্র এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, সেটি প্রকাশ করাও কষ্টকর।
বর্তমানে রাস্তায় চলাচল করা নারীদের জন্য ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণের সংখ্যা যেন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। নিরাপত্তাহীনতার এতোটা অবনতি হয়েছে যে, আজ ৩ বছরের শিশুও নিরাপদ নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, যা নারীদের জীবনে এক অবর্ণনীয় আতঙ্ক তৈরি করেছে।
নতুন সরকার গঠনের পর ভেবেছিলাম দেশ এগিয়ে যাবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কিন্তু নিরাপত্তা তো দূরের কথা, বর্তমানে দলীয় কোন্দল ও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় দেশ যেন আরও পিছিয়ে পড়ছে। অপরাধীরা নির্ভয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ—এসব যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না কেন? কেন সঠিক বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে না? প্রতিবন্ধী, আদিবাসী ও অন্যান্য নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আমরা চিন্তিত।
আমি নিজেই একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার কন্যা হয়েও যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে শঙ্কিত, তখন বুঝি নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা সংকটজনক। সামরিক এলাকার বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেখানে দেশের সেনাপ্রধানেরও এত নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, সেখানে সাধারণ নারীদের নিরাপত্তার কি হবে?
সাত মাস পেরিয়ে গেলেও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কার্যক্রম বা সংস্কার দৃশ্যমান নয়। বরং প্রতিদিন দেশ আরও অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ কী হবে? যদি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে শুধু নারীরাই নয়, পুরো দেশই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।
এতদিন বাক স্বাধীনতা না থাকায় আমরা অনেক কিছুই প্রকাশ করতে পারিনি। তবে এখন অন্তত নিজেদের মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি। আমরা যদি সবাই একত্রিত হয়ে এই সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসি, তাহলে হয়তো সত্যিকারের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারে। বিশ্ব নারী দিবসে আসুন, নারী নিরাপত্তা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দাবি জানাই। আমাদের ঐক্যই পারে এই অন্ধকার কাটিয়ে আলোর পথ দেখাতে।
লিমিয়া দেওয়ান
প্রতিষ্ঠাতা, অন্বেষণ অর্গানাইজেশন