
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতেন মারুফ হাসান। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেও দমে যাননি তিনি। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে এবার তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
মারুফের এই সাফল্যে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী আনন্দিত হলেও দরিদ্র পরিবারের পক্ষে মেডিকেলে পড়ার খরচ বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মারুফ হাসান ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের শালবাড়ি এলাকার কাঁঠালবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী ও মরিয়ম বেগম দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। বসতভিটে ছাড়া তাদের তেমন কোনো সম্পত্তি নেই। অসুস্থ বাবা অন্যের দোকানে কাজ করে সংসার চালান, আর মারুফ অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মারুফ রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। এরপর ভর্তি হন রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজে এবং এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন তিনি। তবে ভর্তি ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা তার পরিবারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
মারুফের বাবা ইউসুফ আলী জানান, তিনি পৈতৃক সূত্রে ২০ শতাংশ ও শ্বশুরের দেওয়া ৩৩ শতাংশ জমির মালিক। এর মধ্যে ২০ শতাংশ জমি ছেলের পড়াশোনার খরচের জন্য বন্ধক রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই বাড়ির পাশে একটি কীটনাশকের দোকানে কাজ করেন।
তিনি আরও বলেন, “বহুদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি। সবসময় স্বপ্ন দেখতাম আমার ছেলেকে ডাক্তার বানানোর। মারুফ গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় ৩ নম্বরের জন্য চান্স পায়নি। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি বিভাগে ভর্তি হলেও সেখান থেকে ফিরে আসে। পরে এলাকায় কোচিংয়ে শিক্ষকতা করে এবারের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়। এবার সে চান্স পেয়েছে, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু মেডিকেলের খরচ চালানো আমাদের পক্ষে কঠিন।”
মারুফের মা মরিয়ম বেগম বলেন, “আমার ছেলে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। আমি চাই, সে বড় ডাক্তার হয়ে গরিবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিক।”
মারুফ বলেন, “বাবার অসুস্থতা ও চিকিৎসার কষ্ট দেখেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা হয়। সেই লক্ষ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। তবে খরচ চালানোর জন্য আমাকে মাঠেও কাজ করতে হয়েছে। দোয়া করবেন, যেন ভালো ডাক্তার হয়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবা করতে পারি।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, “মারুফ হাসান মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় তাকে অভিনন্দন। তার পড়াশোনার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে।”