
ছিনতাই রাজধানীসহ সারা দেশে একটি আতঙ্কের নাম। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে ছিনতাইয়ের মত অপকর্ম। এর শিকার হচ্ছে বিশিষ্টজন থেকে সাধারণ মানুষ অনেকেই। কেবল সন্ধ্যা বা রাতেই যে ছিনতাই হয়, তা কিন্তু নয়। দিনের বেলা কোনো নির্জন রাস্তায় কেউ যদি একা রিকশায় চলাচল করেন, তিনিও ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে পারেন। ঢাকা শহরে ছিনতাইকারীদের বিভিন্ন চক্র রয়েছে। এরা রিকশাযাত্রী বা পথচারীদের টার্গেট করে। আছে মলম পার্টি। এরা ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তির চোখে মলম লাগিয়ে দেয়, ওই ব্যক্তি কিছু¶ণ চোখে কিছুই দেখেন না। এতে চোখ নিয়ে তাদের অনেক ভুগতে হয়। এ ছাড়াও রয়েছে অজ্ঞান পার্টি ও হ্যান্ডশেক পার্টি। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় থাকে প্রধানত বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে। এরা যাত্রীদের একা পেয়ে তার সঙ্গে গল্প করে, ভাব করে, তারপর ওষুধ বা মাদক মেশানো বিড়ি, সিগারেট বা খাবার খাওয়ায়। যাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে তার সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঢাকা শহরের প্রত্যেক বাসিন্দা, বিশেষ করে যারা ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলাচল করেন, তারা সবাই ছিনতাইকারীদের হাতে জিম্মি। ছিনতাইয়ের ঘটনা যদিও পুলিশে রিপোর্ট হয় না, তবুও ধারণা করা যায় বিরাট এই নগরীতে প্রতিদিন প্রায় একশ’ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বেশ কিছুসংখ্যক ছিনতাইকারীকে পুলিশ তাদের সোর্স হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। এজন্য তারা সোর্সমানি বা ভাতা পায়। সোর্সদের কাজ হচ্ছে ছিনতাইকারী ও অন্যান্য অপরাধী সম্পর্কে পুলিশকে সময়মতো অবহিত করা এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়া। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হলো সোর্সরা যেহেতু পুলিশ কর্তৃপ¶ের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত, তাই তারা বেপরোয়া হয়ে নিজেরাই অপরাধ করছে আরও বেশি করে। তারাই এখন বেশি ভয়ঙ্কর। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো পুলিশ ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চায়। পুলিশ ছিনতাইয়ের মামলা নিতে চায় না। মামলা না করে নামকাওয়াস্তে জিডি করতে বলে, এমন খবরও শোনা যায়। তাই এ ধরনের প্রতিটি ঘটনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপ¶ের উদ্যোগে অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন। তথাকথিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অনেকে মোটরবাইক ব্যবহার করে ছিনতাই করে থাকে। মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের ঘাঁটিতে হানা দিতে হবে। কারণ, সেখানেই বেশির ভাগ অপরাধীর আনাগোনা। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। পুলিশ চাইলে ছিনতাই ও ছোটখাটো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই সম্ভব। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছিনতাইকারী ও এসব অপরাধের সাথে যারা যুক্ত তার একটি সঠিক তথ্য নিয়ে লিস্ট তৈরি করে তার প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে।