
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা সদর ইউনিয়নস্থ ৪নং ওয়ার্ডের বটতলী পাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরুধে দুই পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছেন আহতদের মধ্যে ১৭ জন আলম সাইর গংদের ও ৮ জন সোলতান ডিলার গংদের।
জানা যায়, সোলতান আহমেদ (ডিলার) গং এবং আলম সাইর গংদের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও আলীকদম থানায় কয়েকধাপে সামাধনের জন্য বৈঠক হয়। এক পর্যায়ে আলীকদম থানার বৈঠকে ২৬/০৭/২৪ইং (শুক্রবার) সরজমিনে গিয়ে সামাধানের সিদ্ধান্ত হয়। তবে সামাধানের আগের দিনই বৃহস্পতিবার সোলতান গং প্রায় ২ শতাধিক স্থানীয় ও আলীকদমের বাহিরের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে এসে টতলী পাড়ায় আলম শাইর গংদের ব বসতভিটায় হামলা চালায়। এ সময় প্রতিরোধ করতে গেলে আলম শাইর বেগম ও ছেলে মেয়েসহ উভয় পক্ষের মোট ২৫ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় আলীকদম উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। পরে আহতদের কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন।
আলীকদম উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আহতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে আশংকাজনক রয়েছেন শেকাব উদ্দিন ও আবুল বশর।
এদিকে গুরুতর আহত শেকাব উদ্দিন ও আবুল বশরসহ আলম সাইর বেগমদের ০৭ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে শেকাব উদ্দিন চট্টগ্রামে হাসপাতালে আইসিউতে চিকিৎসাধীন আছেন। অন্যানরা চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঘটনার বিষয়ে এলাকাবাসীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় দুইটি ট্রাক গাড়ীতে পুরুষ ও একটি সাদা টুরিস্ট গাড়ি নিয়ে মহিলা আসতে দেখি। গাড়ি থেকে নামার পর সবাই মুখোশ পরা অবস্থায় আলম সাইর বেগম ও তার ছেলে মেয়েদের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে হামলা শুরু করে। পরে আলম শাইর বেগম ও তার ছেলে মেয়েরা বাঁধা দিলে তাদের উপর দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে আঘাত করলে সবাই মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। কিছুক্ষণ পর আলীকদম সদর ইউনিয়নে ০৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও আলীকদম থানার পুলিশ আসে। পুলিশ আসার পরও বাড়ী ঘরে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ০৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আবু ছালাম বলেন, এত বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ইতিপূর্বে আলীকদম হয়নি। আমাকে একজনে ঘটনাস্থল থেকে ফোন দিলে আমি ঘটনাস্থলে যাই। আমি যাওয়ার পরে আলম সাইর বেগমসহ তার ছেলে মেয়েদের মাঠিতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাদের হাসপাতালে পাঠানোর উদ্দেশ্যে উদ্ধার করতে গেলে সোলতান আহমেদ (ডিলার) গং দের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আমার উপরও হামলা চালাতে আসে। পরে আমি নিজের পরিচয় দিলে সন্ত্রাসীরা ফেরদৌস সর্দারের বাড়িতে গিয়ে ভাংচুর করে। তিনি আরো বলেন, এমন ঘটনার জন্য সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরদৌস আহমেদ সর্দার বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, আমি সকালে বাসটার্মিনালে গেলে হঠাৎ আমার পুত্রবধু ফোন দিয়ে হামলার বিষয়ে জানান। সাথে সাথে আমি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই, তারপরও পুলিশ আসতে দেরি হওয়ায় আমি আলীকদম থানায় পুলিশের সহযোগিতা চাইতে যায়। পরে পুলিশ নিয়ে আমার বাড়ির কাছাকাছি গেলে ঐ সন্ত্রাসীরা আমার উপরও হামলা চালায়, একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমি পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পাই। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বাড়িতে এসে দেখি আমার ও আমার ছেলে আবচারের দুইটি ঘরে ভাংচুর করে সন্ত্রাসীরা গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে যায়।
কেন এত বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলো জানতে চাইলে সোলতান আহমেদ (ডিলার)র ছেলে আবু তৈয়ব জানান, আলম সাইর বেগম ও তার ছেলে মেয়েরা আমাদের জায়গা দখল করে রাখায় আমরা দেখতে গেলে আমাদের উপর আগে হামলা চালায় তারা। পরে এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ট্রাক নিয়ে ভাড়াটিয়া লোকজন আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা সবাই ঐ সম্পত্তির ওয়ারিশ, কেউ বাহিরের নয়, আসলে এত বড় ঘটনা হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি -বলে ফোন কেটে দেন আবু তৈয়ব।
সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ের একটি ভিডিও ফুটেজে ও সরজমিনে দেখা যায়, সংগ্রহীত ভিডিওতে প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র হাতে আলম সাইর বেগমদের বসতভিটায় হামলা চালায়। ফেরদৌস আহমেদ ও তার বড় ছেলে আবচারের বাড়ীর দিকে যায় এবং ফেরদৌস ও আবচারের বাড়ির দরজা জানালাসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে।
এ ঘটনায় আবচার উদ্দিন বলেন, ঘটনার সময় আমাদের বাড়িতে আমার স্ত্রী ছাড়া কেউ ছিলনা। আমার আম্মা (মনোয়ারা বেগম) ছিল ছোট ভাই নুরুল ইসলাম দুইটি কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া ভাইকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে গিয়েছিল। পুলিশ আসার পর আমার বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে সন্ত্রাসীরা আমার স্ত্রী ইসমত আরার উপর হামলা চালিয়ে আহত করে এবং আমাদের দুইটি বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে টাকা পয়সা লুট ও বাড়ীতে থাকা বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে যায়।
এ সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার তবিদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, এবং পুলিশি সহযোগিতায় আহতদের আলীকদম হাসপাতালে আনা হয়।
এ ঘটনায় দু’পক্ষের পৃথক দুটি মামলা হয়েছে, আসামীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যহত আছে বলেও জানান তিনি।