Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / ঈদের আনন্দে মানবতার বিজয় ও ঐক্যের আহ্বান হেযবুত তওহীদের এমামের - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ঈদের আনন্দে মানবতার বিজয় ও ঐক্যের আহ্বান হেযবুত তওহীদের এমামের

March 31, 2025 10:50:25 AM   অনলাইন ডেস্ক
ঈদের আনন্দে মানবতার বিজয় ও ঐক্যের আহ্বান হেযবুত তওহীদের এমামের

প্রতি বছরই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই হাজারো দুঃখ-বেদনার মাঝেও প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে দেখা দেয় আনন্দের আলোকচ্ছটা। ঘরে ঘরে বাচ্চারা খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। দোকানে, শপিংমলে, রেডিও টেলিভিশনে বেজে ওঠে নজরুলের সেই বিখ্যাত গান, ‘ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ...’।

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এবছর একটা অন্যরকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন। ঈদের নামাজ শেষে সুলতানী আমলের ঐতিহ্য অনুসরণ করে ঈদ আনন্দ মিছিল বের করা এবং ঈদ মেলার আয়োজন এবারের ঈদে একটি ভিন্ন মাত্রার আনন্দ যোগ করেছে।

এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একটা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আশা, আকাঙ্ক্ষা, চেতনা, আন্দোলন, সংগ্রাম, আরেক দিকে চরম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে প্রতিটি দিন। সামাজিক অনিরাপত্তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মব সৃষ্টি করে দেদারছে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। উগ্রবাদীদের দ্বারা এ পর্যন্ত কমছে কম শতাধিক মাজার প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ হয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে শত শত ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ বছর রমজান মাসের সবচেয়ে রোমহর্ষক আলোচিত বিষয় ছিল ধর্ষণ। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ধর্ষকরা; বাসে ধর্ষণ, স্কুল-মাদ্রাসায় ধর্ষণ, মাদ্রাসায় কোরআন শিখতে যাওয়া শিশুরা শিক্ষকদের দ্বারা বলাৎকারের শিকার হচ্ছে, মসজিদের মতো পবিত্র স্থানে ধর্ষণ হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক চার-পাঁচ বছরের কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে নিষ্ঠুরভাবে খুন হচ্ছে।

বিক্ষুব্ধ মানুষ ধর্ষকদেরকে ধরে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। ধর্ষকের পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবীকে হেনস্তা করছে। শ্রমিকরা ৩-৪ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে চিৎকার করছে। রমযান মাসেও প্রতিদিনই রাজপথ ছিল দাবি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিলের দখলে।

এর মধ্যে মুসলমানদের সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষোভের জায়গা হচ্ছে ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত হামলা, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন। গত রমজানের মতো এই রমজানেও লাশের মিছিল সেখানে। চব্বিশ ঘণ্টায় পাঁচশ মুসলমানকে হত্যা করার রেকর্ড ছাড়িয়েছে ইজরাইলিরা। বোমার আঘাতে নির্বিচারে মারা যাচ্ছে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ বেসামরিক মানুষ। তারা সেহরি খেতে পারছে না, ইফতার করতে পারছে না। এই উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, ঘৃণা, আতঙ্ক, ভয় ইত্যাদির মধ্য দিয়েই রমজান মাস কেটেছে। সে হিসেবে এবার ঈদের আমেজ, ঈদ বলতে যে আনন্দকে বোঝায়, ঈদ মানে যে খুশি সেই মানেটা ম্লান। অনেকে হয়ত বলবেন এটা আপেক্ষিক। চাইলে নরকে বসেও হাসা যায়। আমাদের কথা হচ্ছে, আমাদের সংগ্রাম, আন্দোলন, প্রচেষ্টাই হচ্ছে মানুষকে সত্যিকারে ঈদ উপহার দেওয়া, মানুষ যেন সত্যিকারের আনন্দ পায়, সত্যিকারের হাসি হাসতে পারে।

একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আরেকদিকে জীবনের অনিশ্চয়তা। রাজনীতির নামে হানাহানি, প্রতিনিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষ এই অবস্থায় ঈদের প্রকৃত আনন্দ অনুভব করা মুশকিল। চুরি-ছিনতাইয়ের ভয়ে মানুষ নিশ্চিন্তে শপিং করতে পারে না। আমরা মনে করি যে, ঈদের প্রকৃত আনন্দ সেদিনই মোমেনরা অনুভব করবে যেদিন আল্লাহর সত্য দিন দীনুল হক সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, যেদিন মানুষ মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে।

আল্লাহর দিন দীনুল হক প্রতিষ্ঠিত হলে চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানীমুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। সেদিন প্রকৃতপক্ষে নারীরা তাদের সম্মান-মর্যাদা পাবে। একা একটি নারী ভ্রমণ করবে শত শত মাইল, না থাকবে ইজ্জত হারানোর ভয় না থাকবে চুরি-ডাকাতির ভয়। চাঁদাবাজী থাকবে না, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করবে না, ওজনে কম দিবে না, খাদ্যে ভেজাল মেশাবে না, বিচারের নামে অবিচার হবে না, প্রহসন হবে না। গুজব ছড়িয়ে মব সৃষ্টি করে কোনো গোষ্ঠী কারো বাড়ি-ঘরে হামলা করতে পারবে না, মানুষকে পিটিয়ে রাস্তায় মেরে ফেলা হবে না। আচম্বিৎ ডাকাতের কবলে পড়ে মানুষ সর্বশান্ত হবে না। মানুষ ঘুষ খাবে না, দুর্নীতি থাকবে না, টাকা পাচার থাকবে না। সুদ থাকবে না, অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে না -এমন একটি শান্তিপূর্ণ সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ যেদিন আমরা নির্মাণ করতে পারব সেদিনই প্রকৃতপক্ষে ঈদের আনন্দ অনুভব করব। যেদিন মাথার উপর বোমা পড়বে না, বোমার আঘাতে বাড়ি-ঘর লণ্ডভণ্ড হবে না, কোনো মানুষ উদ্বাস্তু হবে না, যেদিন সকলের প্রকৃত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে সেদিনই হবে প্রকৃত ঈদ।

এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের শিশু সন্তান হারানো সেই বাবা-মায়েদের কিসের ঈদ, বাবা-মা হারানো সেই শিশুগুলোর কেমন ঈদ? উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাসকারীদের জীবনে কখনো ঈদ আসে না।

আজকের এই দিনে মহান রবের কাছে ফরিয়াদ জানাই, অতিসত্বর আমরা যেন একটি শক্তিশালী জাতিসত্ত্বা তৈরি করে অন্যায়, অবিচার নির্মূল করে একটি আদর্শ সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। সাম্রাজ্যবাদী, অস্ত্র-ব্যবসায়ী রাষ্ট্রগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার হাত থেকে আল্লাহ যেন আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে রক্ষা করেন। এই মাটিকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি, এই মাটিতে আমরা সেজদা করি, এই মাটির সঙ্গে মিশে আছে আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্থিমজ্জা। আমরা শপথ করেছি আল্লাহর রসুল এবং তাঁর সাহাবিগণ যেভাবে মদিনাকে রক্ষা করেছেন, আমরাও সেভাবে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশকে রক্ষা করে যাব ইনশাল্লাহ। সেই লক্ষ্যেই আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে বিজয় দান করেন।

আমাদের হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের রংপুরের চল্লিশটি পরিবার আজকে বাড়িছাড়া। গুজব ছড়িয়ে উম্মাদনা সৃষ্টি করে তাদের বাড়িঘরে ভাংচুর, লুটতরাজ চালানো হয়েছে। তাদের জন্য ঈদের আনন্দ নেই। তবুও ঈমানী চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সমৃদ্ধ সমাজ নির্মাণের জন্য, আল্লার দীন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা তওহীদের দিকে মানুষকে ডাক দিয়ে যাচ্ছেন, মাঠে-ময়দানে কাজ করছেন, জেহাদী চেতনা নিয়ে জেহাদ করছেন আল্লাহর রাস্তায়। এমন সত্যনিষ্ঠ মোখলেস মোমেন বান্দাদেরকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন।

যারা আমাদের সঙ্গে আছেন, আমাদের এই পত্রিকার পাঠক, পত্রিকা প্রকাশে ডেস্কে যারা কাজ করেন, ছাপাখানায় যারা কাজ করেন, যারা প্রচারণায় কাজ করেন এবং যে সমস্ত মানুষ এই প্রচলিত মানুষের তৈরি ব্যবস্থা পরিবর্তন করে আল্লাহর দেওয়া ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাই, শুভেচ্ছা জানাই, মোবারকবাদ জানাই। 
সবাই মিলে জীবনের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ উৎসর্গ করে একটা সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে যাব। ইনশাল্লাহ ইসলামের বিজয়, মানবতার বিজয় সুনিশ্চিত। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।