Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / ঈমানহীন আমল অর্থহীন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ঈমানহীন আমল অর্থহীন

June 26, 2024 02:38:15 PM   অনলাইন ডেস্ক
ঈমানহীন আমল অর্থহীন

রাকীব আল হাসান:
রসুলাল্লাহ (সা.) বলেছেন, “পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। (১) এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ (হুকুমদাতা, বিধানদাতা, সার্বভৌমত্বের মালিক) নেই ও মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রসুল, (২) সালাত (নামাজ) কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ পালন করা এবং (৫) রমজান মাসের সিয়াম পালন করা।” [সহিহ্ বুখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিযি ২৬০৯, নাসায়ী ৫০০১, আহমাদ ৬০১৫]। এই হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট হলো যে, ইসলামের প্রথম বুনিয়াদ বা স্তম্ভই হচ্ছে ঈমান এবং পরবর্তী স্তম্ভগুলো আমল। অর্থাৎ আগে ঈমান অপরিহার্য, তারপর আমল প্রয়োজন। বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবার জন্য কোর’আনের এই আয়াতগুলো লক্ষ করুন-

আল্লাহ বলেছেন, “যারা ঈমান আনে ও আমলে সালেহ করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত যার নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত।” (সুরা বাকারা-২৫)।

“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সওম (রোজা) ফরজ করা হলো...” (বাকারা-১৮৩)।

“যারা ঈমান আনে, আমলে সালেহ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট সওয়াব নির্ধারিত আছে।” (বাকারা-২৭৭)।

“যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের প্রতি আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তাদের জন্য রয়রেছ ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।” (মায়িদা-৯)। “যারা ঈমান এনেছে, হেজরত করেছে, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করেছে আর যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহযোগিতা করেছে তারাই প্রকৃত মো’মেন। তাদের জন্য আছে ক্ষমা আর সম্মানজনক জীবিকা।” (আনফাল-৭৪)।
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও আমলে সালেহ করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন।” (সুরা নূর ৫৫)।

এমন আরও অনেক আয়াত রয়েছে যার উল্লেখ করতে গেলে লেখার কলেবর বড় হয়ে যাবে। যাইহোক, উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ যেখানেই কোনো আমলের কথা বলেছেন সেখানেই সর্বপ্রথম ইমানের কথা বলেছেন। জান্নাতের প্রতিশ্রুতি, ক্ষমার প্রতিশ্রুতি, বিজয়ের আশ্বাস, কর্তৃত্ব দানের অঙ্গীকার, পুরস্কারের সুসংবাদ, উপদেশ, নির্দেশ এগুলো কেবল মো’মেনদেরকেই বলেছেন।

নবি করিম (সা.) এর নবুয়াতের ২৩ বছরের জীবনে ১৩ বছর শুধু ঈমানের, তওহীদের ডাক দিয়েছেন। আজকে এই ঈমানেরই সংকট। এটা নিয়েই এই লেখা।

এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রায় ১১ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু যার মধ্যে ৮ কোটিরও বেশি মুসলমান। আমরা যেই মুহূর্তে ঈদ আনন্দে মেতে উঠলাম, ধুমধাম করে উৎসবের আয়োজন করলাম ঠিক তখন উদ্বাস্তু মুসলমানেরা নতুন কাপড় তো দূরের কথা সামান্য খাবারও অনেকের মুখে ওঠেনি। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জীবনে ঈদ আসেনি, কেবল আহাজারির শব্দে তাদের আকাশ, বাতাস ভারী হয়ে আছে। রক্তমাখা লাশ, বিকলাঙ্গ স্বজন আর ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না যাদের প্রতিদিনের সঙ্গী তাদের জীবনে আর কিছুতেই আনন্দ বয়ে আনবে না। কেবল ফিলিস্তিনি মুসলমান নয়, সারা পৃথিবীতে আজ মুসলমানরা লাঞ্ছিত, অপমানিত, নির্যাতিত, নিগৃহীত। আমরা কিছুই করতে পারছি না। কিন্তু এই পরিণতি কেন? মহান আল্লাহ তো বলেছেন, “তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে উত্থান ঘটানো হয়েছে...।” (ইমরান-১১০)। কেন শ্রেষ্ঠ জাতি আজ অন্য জাতির গোলাম, কেন অন্য সকল জাতির পায়ে ফুটবলের মতো লাথি খাচ্ছে?

এর কারণ প্রধানত দুইটা। মুসলিম দাবিদার এই জাতির প্রকৃতপক্ষে ঈমান নেই এবং ইসলামের প্রকৃত আকিদা নেই। আমরা অনেকেই মনে করি, যেহেতু আমরা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখি কাজেই আমাদের ঈমান আছে। তাছাড়া আমরা তো নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, সামর্থ্য থাকলে হজ করি, যাকাত দিই, জিকির-আসগার, তসবি-তাহলিল করি কাজেই আমরা তো পাক্কা মো’মেন। কিন্তু না, এখানেই আমাদের ভুল। এমন বিশ্বাস কিন্তু মক্কার কাফেরদেরও ছিল, তারাও আল্লাহর এবাদত করত, হজ করত, কোরবানি করত। মক্কার কাফের-মোশরেকরা যে আল্লাহতে বিশ্বাস করত তার স্বাক্ষ্য স্বয়ং আল্লাহই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “(হে নবী) তুমি যদি তাদেরকে (কাফের-মুশরিকদেরকে) জিজ্ঞাসা কর- আকাশ ও জমিন কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে- ওগুলো প্রবল পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।” (সুরা যুখরুফ-৯)। আল্লাহ আছেন সেটা যেমন তারা বিশ্বাস করত, তেমনি আল্লাহ যে মহাজ্ঞানী, মহা পরাক্রমশালী সেটাও তারা বিশ^াস করত। তবুও রসুলাল্লাহ (সা.) তাদেরকে ডাক দিলেন কলেমার দিকে, তওহীদের দিকে। তাহলে তাদের সমস্যাটা কোথায় ছিল? তারা আসলে আল্লাহকে বিশ^াসও করত, তাঁর এবাদতও করত কিন্তু তারা তাদের সমাজ আল্লাহর হুকুম-বিধান দ্বারা পরিচালনা করত না, বরং তারা তাদের পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া গোত্রীয় রীতি-নীতি, প্রথা বা সুন্নাহ দ্বারা তাদের সমাজ, তাদের সংস্কৃতি, তাদের অর্থ-ব্যবস্থা, তাদের বিচার-আচার ইত্যাদি পরিচালনা করত আর তাদের ধর্মীয় কাজেও তারা পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া রীতি অনুসারে মূর্তিপূজা করত। এজন্য রসুলাল্লাহ (সা.) তাদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা আমার একটি কথা মেনে নাও, তোমরা বলো- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ”। এর ফলও তিনি বলে দিলেন, এটা মেনে নিলে দুনিয়াতে সফলকাম হবে, পৃথিবী পায়ের নিচে আসবে আর পরকালে জান্নাতে যাবে।
তাহলে এই তওহীদ- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর মানে কী?

‘লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ’- এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা, বিধানদাতা নেই। এক কথায় সার্বভৌমত্ব, সর্বময় কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে- আল্লাহর হাতে নাকি মানুষের হাতে? বর্তমানে এই কলেমার ইলাহ শব্দের অর্থ মা’বুদ করা হয়। কিন্তু মা’বুদ আরবি শব্দ, ইলাহও আরবি শব্দ। দুটো শব্দই কোর’আনে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন। মাবুদ অর্থ উপাস্য, তিনি সেই সত্তা যার এবাদত, উপাসনা করতে হবে (He who is to be worshiped)।

আর ইলাহ শব্দের অর্থ তিনি সেই সত্তা যার হুকুম, আদেশ মানতে হবে (He who is to be obeyed)। আল্লাহ ইলাহ এবং মাবুদ উভয়ই। কিন্তু কলেমায়, তওহীদে কেবল ইলাহ হিসাবে মেনে নেওয়ার জন্য দাবি করা হয়েছে। আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মানার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার একটি চুক্তি যে বান্দা তার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, জাতি, অর্থনীতি, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি কোনো ক্ষেত্রে আর কারো আধিপত্য, হুকুম মানবে না। যদি মানে তাহলে সেটা হবে শেরক, অংশীবাদ। আর যদি আল্লাহর হুকুম সম্পূর্ণ অস্বীকার করে সেটা হবে কুফর (প্রত্যাখ্যান)।

আল্লাহর অসংখ্য গুণাবলী যেমন তিনি সৃষ্টিকর্তা, রেজেকদাতা, উপাস্য ইত্যাদি সব স্বীকার করেও যদি কেউ তাঁর হুকুম না মানে, অর্থাৎ তাঁকে ইলাহ বলে না মানে তাহলে সে যত আমল করুক সব ব্যর্থ হবে। সে জান্নাতে যেতে পারবে না। এজন্য ইসলামের সমস্ত বিষয়টিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। ঈমান ও আমল। যে ঈমান আনল তার জন্য আমল। এই ঈমান কিসের উপর? আল্লাহর অস্তিত্বে নয় কেবল, আল্লাহর হুকুমের উপর, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর ঈমান। এটা যে আনবে তার জন্য নামাজ, রোজা, হজ্বসহ অন্যান্য আমল প্রযোজ্য হবে।

যখনই আমি আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মেনে নিব তখন থেকে আমি আল্লাহর আদেশ-নিষেধের বিপরীতে আর কারও আদেশ-নিষেধ মানতে পারব না। কিন্তু মুসলিম দাবিদার এই জাতি আজ মেনে চলছে কার হুকুম? কার বিধান? কার আইন? আমরা আসলে আল্লাহর হুকুম-বিধান বাদ দিয়ে মেনে চলছি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অনুকরণে তৈরি করা মানবরচিত আইন-কানুন, হুকুম-বিধান। এ কারণে আমরা ঈমান থেকে, কলেমা থেকে বের হয়ে কার্যত কাফের-মুশরিক হয়ে গেছি। আল্লাহ পাক বলেছেন, “যারা আমার নাজেল করা বিধান (কোরানের আইন) অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না তারা কাফের।” (মায়েদা-৪৪)। তাহলে যেই কারণে আরবের কাফের-মুশরিকদের আল্লাহর প্রতি বিশ^াস থাকা সত্ত্বেও, অনেক ইবাদত করা সত্ত্বেও তারা কাফের ছিল, মুশরিক ছিল সেই একই কারণে আমরাও ইসলাম থেকে খারজি হয়ে কার্যত কাফের-মুশরিক হয়ে গেছি। এখন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদেরকে আবার কলেমার উপর ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আল্লাহর সাথে নতুন করে চুক্তি করতে হবে।

যুগে যুগে আল্লাহ সকল নবী-রসুলকে দিয়ে এই একটি বাক্যই পাঠিয়েছেন, এই একটি দাবিই মানুষের কাছে আল্লাহ করেছেন, সেটা হলো আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মেনে নেওয়ার দাবি। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রসুলই পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওয়াহি করিনি যে, আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। কাজেই তোমরা আমারই ইবাদত কর।” (আম্বিয়া-২৫)। অর্থাৎ যুগে যুগে নবী-রসুলগণ (আ.) এসে মানুষের কাছে এই একই কলেমার দাওয়াত দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর সাথে মানুষের একটি চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যারা ঈমান আনবে, তওহীদের ঘোষণা দিবে তাদের সাথে মূলত আল্লাহর একটা চুক্তি হবে। অর্থাৎ বান্দার পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে আল্লাহর হুকুম-বিধান, আইন-কানুন মেনে নেওয়ার আর আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি হয়েছে জান্নাতের। যেমন রসুলাল্লাহ (সা.) পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আল্লাহর সাথে তার বান্দার চুক্তি এই যে, বান্দা তার পক্ষ থেকে যদি এই শর্ত পালন করে যে, সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ অর্থাৎ বিধাতা বলে স্বীকার করবে না- তবে আল্লাহও তার পক্ষ থেকে এই শর্ত পালন করবেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (হাদীস- মুয়ায রা. থেকে বোখারী, মুসলিম, মেশকাত)।

এর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহর রসুল কী বলেছেন খেয়াল করুন। তিনি একদিন আবুজর গেফারিকে (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই ঘোষণা দিল যে আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করল।” আবুজর (রা.) বিস্মিত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “রসুলাল্লাহ! যদি সে চুরি করে এবং ব্যভিচার করে?” রসুলাল্লাহ বললেন, “হ্যাঁ, যদি সে চুরি ও ব্যভিচার করে তবুও জান্নাতে দাখিল হবে।” আবুজর (রা.) বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাই তিনি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বার বার একই প্রশ্নই করতে থাকলেন। চারবার একই উত্তর দেওয়ার পর, রসুলাল্লাহ বললেন, “হ্যাঁ, সে জান্নাতে যাবে যদি সে চুরি করে, যদি সে ব্যভিচার করে এমন কি যদি মাটিতে আবু যারের নাক ঘসেও দেয়।” (আবুজর গেফারি রা. থেকে বোখারি)।

অপর হাদীসে এসেছে- যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে “আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা (ইলাহ) নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত” তার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে। (ওবাদাহ বিন সাবেত থেকে মুসলিম, মেশকাত)।

আবার মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ শিরকের পাপ ক্ষমা করবেন না, এ ব্যতীত অন্য সব পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” (নিসা-৪৮)। তওহীদের বিপরীত হলো শিরক। এই শিরক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। অর্থাৎ আমল করার পূর্বে আমাকে শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হতে হবে। ঈমান আগে, আমল পরে। আজ বিশ্বময় আমলের ওয়াজ হচ্ছে কিন্তু ঈমান নিয়ে আলোচনা নেই। কিন্তু এখন আমাদেরকে ঈমান নিয়ে আলোচনা করতে হবে, ঈমানে ফিরে আসতে হবে, তওহীদে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- ঈমান আনার পর অর্থাৎ তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ হবার পর আমাদের কাজ কী হবে? মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় মো’মেন তারা যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনে, অতঃপর কোনো সন্দেহ পোষণ করে না, জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ (সর্বাত্মক সংগ্রাম) করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।” (সুরা হুজুরাত- ১৫)। এই আয়াতে আল্লাহ মো’মেনের সংজ্ঞা দিয়েছেন। অর্থাৎ মো’মেন হতে হলে ঈমান আনার পর আরও একটি কাজ অবশ্যই করতে হবে আর সেটা হলো- জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা। অর্থাৎ তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ হবার পর আমাদেরকে জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর দেওয়া সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জেহাদ করতে হবে। দীন মানে হলো জীবনব্যবস্থা। যেমন গণতন্ত্র একটা দীন, সমাজতন্ত্র একটা দীন। ঠিক একইভাবে ইসলামও একটা আলাদা দীন বা জীবনব্যবস্থা।

এই দীন দুই প্রকার- আল্লাহর দেওয়া দীন ও মানুষের তৈরি করা দীন। মানুষও দুই প্রকার- কাফের ও মো’মেন (সুরা তাগাবুন-২)। যারা আল্লাহর দেওয়া দীন গ্রহণ করবে তারা মো’মেন আর যারা মানুষের তৈরি করে নেওয়া দীন গ্রহণ করে নেবে তারা কাফের। মানুষের সামনে কিন্তু রাস্তাও দুইটা- হেদায়াহ ও দালালাহ। হুকুম হবে দুইটা- আল্লাহর হুকুম ও ইবলিসের হুকুম। আনুগত্যও দুই ধরনের হবে- আল্লাহর আনুগত্য ও ইবলিসের আনুগত্য। দুনিয়ার পরিস্থিতিও দুই ধরনের হবে- শান্তি, সুবিচার ও অবিচার, অশান্তি। এখন আমরা যদি হেদায়াতে উঠতে চাই তাহলে আল্লাহর হুকুম মানতে হবে, আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে। তাহলে সমাজে ন্যায়, সুবিচার, শান্তি আসবে। আর এর পরিণতি স্বরূপ আল্লাহ আখেরাতে দান করবেন জান্নাত।

আর এগুলোর জন্য লাগবে দীন প্রতিষ্ঠা করা। কারণ দীন প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া সম্পূর্ণভাবে মানা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “হে মো’মেনগণ, তোমাদের উপর কেসাস ফরজ করা হলো...”। (বাকারা-১৭৮)। এখন আপনি কি চাইলেই কেসাসের বিধান মানতে পারবেন? আবার আল্লাহ বলেছেন, “ হে মো’মেনগণ তোমরা সুদ খেয়ো না...।” (আল ইমরান- ১৩০)। এখন এই সুদভিত্তিক অর্থনীতি কি আপনি বাদ দিতে পারবেন? এজন্য আল্লাহর দেওয়া দীনকে পূর্ণাঙ্গরূপে মানতে হলে, দীনের পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে হলে অবশ্যই দীন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর দীন প্রতিষ্ঠার করার নীতি আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কোর’আনে। সেটা হলো- জেহাদ ও কেতাল। এবং যারা এই দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ করবে না তারা মো’মেনও হতে পারবে না। আল্লাহ মো’মেনের সংজ্ঞার মধ্যেই দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তথা জেহাদের শর্ত জুড়ে দিয়েছেন (হুজুরাত-১৫)।

জান্নাতে যাবে মো’মেন, সালাহ কায়েম করবে মো’মেন, যাকাত দেবে মো’মেন। আল্লাহ সাহায্য করবেন মো’মেনকে। মো’মেনের উপর সমস্ত রহমত বর্ষিত হবে। আজ এই দীনের মধ্যে মুসলমানরা নাই। তওহীদেও নাই, দীন প্রতিষ্ঠায়ও নাই। মাঝখানে নামাজ পড়ছে, রোজা রাখছে। সহিহ আমল করে যাচ্ছে। কিন্তু যার ঈমান নাই তার হাজার আমল করেও কোনো লাভ নাই।

এখন মুক্তির একটাই উপায় যেটা আল্লাহর রসুল আরববাসীর সামনে তথা মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। সেটা হচ্ছে তওহীদের চুক্তিতে ফিরে আসা। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সকল ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এতে করে তারা দুই দিকে লাভবান হবে; প্রথমত তারা দুনিয়াতে শ্রেষ্ঠত্ব পাবে, পারস্পরিক শত্রুতা ভুলে ভাই ভাই হতে পারবে, তাদের সমাজ শান্তিময় হবে। দ্বিতীয়ত তাদের সমস্ত ব্যক্তিগত অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতে দাখিল করাবেন।

[লেখক: শিক্ষাবিদ। যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১]