
শাহাদত হোসাইন:
গাজীপুরের শ্রীপুরে দুর্নীতির দায়ে ৬ নং বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন ও এক ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ৪৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাৎ প্রমাণিত হওয়ায় চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন এবং একই ইউপির ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য হারুনুর রশিদকে বহিস্কার করা হয়।
সোমবার (২৬ জুন)স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ জন সদস্য একসাথে চেয়ারম্যানের সকল কাজকর্ম বয়কট করেন এবং পরিষদে আসা থেকে বিরত থাকে তারা।
বিষয়টি নিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে গাজীপুর জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি মাঠে নামেন। বিস্তর তদন্ত শেষে আটটি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছে মর্মে ৮৫ পৃষ্ঠায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর গাজীপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসক তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রেরণ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার বরমী ইউনিয়ন পরিষদের কেবলমাত্র ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আটটি প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। যে সকল রাস্তায় প্রকল্প দেখানো হয়েছে সে সকল প্রকল্পের রাস্তার মধ্যে বিধিবহির্ভূতভাবে এলজিইডির ৪টি প্রকল্পের সাথে ওভারল্যাপিং করে, অর্থাৎ আগে থেকেই এলজিইডি কর্তৃক রাস্তা গুলো পাকা করণ করা ছিলো এমন রাস্তায় প্রকল্প দেখানো হয়েছে।অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই প্রকল্পসমুহ নেয়া হয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়। এই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সরকারের কি পরিমান অর্থ এবং কি পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে তা জানতে চেয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে পুনরায় তদন্ত দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সেই তদন্ত মোতাবেক ৪৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিলসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক। সে মোতাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন ও সদস্য হারুনুর রশিদ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ)আইন, ২০০৯এর ৩৪(৪)(খ)(ঘ)ধারায় অপরাধ সংঘটিত করায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের স্বীয় পদ থেকে তাদেরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হয়েছে। নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।