Date: May 20, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী

March 08, 2023 08:13:23 PM   সম্পাদকীয়
এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী

ভাগ্যরজনীতে যাঁর ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভাব

ঈদুল ফেতর, ঈদুল আযহা, শবে কদর ইত্যাদি বড় বড় কয়েকটি পর্ব এবং উৎসবের পরেই আরেকটি বড় আনুুষ্ঠানিকতা মুসলিম সমাজে পালন করতে দেখা যায়, তা হলো শবে-বরাত। যদিও হাদিস ও ইতিহাসে শবে-বরাত সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছু পাওয়া যায় না, তবে এটুকু জানা যায় যে, রসুলাল্লাহ এই রাতে জাগ্রত থেকে নফল ইবাদত করতেন এবং দিনে সওম থাকার জন্য বলেছেন (মুসলিম শরিফ)। যাই হোক, এটা সত্য যে এই রজনীকে অধিকাংশ মুসলিমই সৌভাগ্যরজনী হিসাবে পালন করছে। যে যেই কারণেই করুক আমাদের কাছে এই রজনীর তাৎপর্য, গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য আরও মহিমান্বিত হয়েছে এইজন্য যে, এই পবিত্র রজনীতে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা মহামান্য এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ধরপৃষ্টে আবির্ভূত হন।

পন্নী পরিবার:
ঐতিহ্যবাহী পন্নী জমিদার পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। ইতিহাসের পাঠকমাত্রই তাঁর পরিবারের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস জানেন। সুলতানী যুগে এবং মোগল আমলে এ পরিবারের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন অত্র এলাকার শাসক। এমন কি তারা দীর্ঘকাল বৃহত্তর বাংলার (তদানীন্তন গৌড়) স্বাধীন সুলতান ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, শি¶া, সংস্কৃতির সঙ্গে এই পরিবারের কীর্তি এক সূত্রে গাঁথা। প্রাচ্যের আলীগড় বলে খ্যাত ‘সা’দাত কলেজের’ প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওয়াজেদ আলী খান পন্নী। এমন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা এবং অর্থদাতা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন এমামুয্যামানের মায়ের নানা।

এমামুয্যামানের বর্ণাঢ্য জীবন:
এ পরিবারেরই একজন সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, যাঁর নিজেরও রয়েছে কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবন-ইতিহাস। মাননীয় এমামুয্যামান করটিয়া, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারে ১৯২৫ সনের ১১ মার্চ তথা ১৫ শাবান, শেষ রাতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক যিনি তাঁর সমগ্র জীবন সত্য সন্ধান এবং সত্যের জন্য লড়াই করে গেছেন। তাঁর ঘটনাবহুল ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্যও আইনভঙ্গের কোন রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের কোন নজির নেই। আধ্যাত্মিক ও মানবিক চরিত্রে বলীয়ান এ মহামানব সারাজীবনে একটিও মিথ্যা শব্দ উচ্চারণ করেন নাই।
মাননীয় এমামুয্যামানের শিক্ষাজীবন
তাঁর কৈশোর কাটে করটিয়ার নিজ গ্রামে। শি¶াজীবন শুরু হয় রোকাইয়া উচ্চ মাদ্রাসায়। দুই বছর মাদ্রাসায় পড়ার পর তিনি ভর্তি হন এইচ. এন. ইনস্টিটিউশনে। এই স্কুল থেকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৪২ সনে মেট্রিকুলেশন (বর্তমানে এস.এস.সি) পাশ করেন। এরপর সা’দাত কলেজে কিছুদিন অতিবাহিত কোরে ভর্তি হন বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে। সেখানে প্রথম বর্ষ শেষ কোরে দ্বিতীয় বর্ষে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন যা বর্তমানে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজ নামে পরিচিত। সেখান থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এমামুয্যামান
কলকাতায় তাঁর শি¶ালাভের সময় পুরো ভারত উপমহাদেশ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তাল আর কলকাতা ছিল এই বিপ্লবের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। আন্দোলনের এই চরম মুহূর্তে তরুণ এমামুয্যামান ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। সেই সুবাদে তিনি এই সংগ্রামের কিংবদন্তীতুল্য নেতৃবৃন্দের সাহচর্য লাভ করেন যাঁদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ্, অরবিন্দু ঘোস, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দী অন্যতম। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান আল মাশরেকীর প্রতিষ্ঠিত ‘তেহরীক এ খাকসার’ আন্দোলনে যোগ দেন যে আন্দোলনটি এর অনন্য শৃংখলা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে ভারতবর্ষব্যাপী বিস্তার লাভ করেছিল এবং ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এমামুয্যামান খুব দ্রুত তাঁর চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ও পুরাতন নেতাদের ছাড়িয়ে পূর্ববাংলার কমান্ডারের দায়িত্বপদ লাভ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি দুঃসাহসী কর্মকাণ্ড ও সহজাত নেতৃত্বের গুণে সমগ্র ভারতবর্ষ থেকে বিশেষ কাজের (ঝঢ়বপরধষ অংংরমহসবহঃ) জন্য বাছাইকৃত ৯৬ জন ‘সালার-এ-খাস হিন্দ’ (বিশেষ কমান্ডার, ভারত) এর অন্যতম হিসাবে মনোনীত হন। তখন এমামুয্যামানের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। দেশ বিভাগের অল্পদিন পর তিনি বাংলাদেশে (তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তান) নিজ গ্রামে প্রত্যাবর্তন করেন।
চিকিৎসক এমামুয্যামান
ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর তিনি হোমিও মেডিসিন নিয়ে পড়শুনা করে মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদান শুরু করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসকে পরিণত হন। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান আবু সাঈদ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি তাঁর রোগীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং এমামুয্যামানকে কবি নজরুলের চিকিৎসায় নিয়োজিত বোর্ডের সদস্য হিসাবে মনোনীত করেছিলেন। 
শিকারী এমামুয্যামান
শিকারের নেশা তাঁর রক্তে মিশে ছিল। বালক বয়সে দাদা মোহাম্মদ হায়দার আলী খান পন্নী ও বাবা মোহাম্মদ মাহ্দী আলী খান পন্নীর কাছে তাঁর শিকারের হাতেখড়ি। সেই থেকে সত্তর দশকের গোড়া পর্যন্ত- তিনি দেশের বিভিন্ন পাহাড়ে ও বনে-জঙ্গলে ঘুরে শিকার করেছেন। বাংলাদেশে শিকারের সত্য ঘটনা অবলম্বনে প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন মাননীয় এমামুয্যামান। ১৯৬৪ সালের গোড়ার দিকে ‘মুক্তধারা’ থেকে তাঁর লেখা “বাঘ-বন-বন্দুক” বইটি প্রকাশিত হয়। সে সময় বইটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে আদৃত হয়। তৎকালীন শিক্ষাবোর্ড বইটিকে দশম শ্রেণির সহপাঠ হিসেবে মনোনীত করে। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, অধ্যাপিকা আনোয়ারা খাতুনসহ আরো অনেক বরেণ্য লেখক, ব্যক্তিবর্গ ও পত্র-পত্রিকা বইটি সম্পর্কে তাদের সপ্রশংস অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়া পকিস্তান বেতার থেকেও বইটির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।