Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / আন্তর্জাতিক / কাঁদতে কাঁদতে গাজার বাসিন্দা বললেন, ‘আমরা তো সব হারিয়েছি, ঈদটা কষ্টের’ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

কাঁদতে কাঁদতে গাজার বাসিন্দা বললেন, ‘আমরা তো সব হারিয়েছি, ঈদটা কষ্টের’

March 31, 2025 10:17:42 AM   অনলাইন ডেস্ক
কাঁদতে কাঁদতে গাজার বাসিন্দা বললেন, ‘আমরা তো সব হারিয়েছি, ঈদটা কষ্টের’

ফিলিস্তিনের গাজায় রোববার পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে ছিল না উৎসবের আমেজ। এ দিনও সেখানে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মুসলিমদের খুশির দিনটিতে গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি।

দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে চলা হামলায় গাজায় আর কোনো মসজিদ অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। রোববার তাই উপত্যকাটির বাসিন্দাদের ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদের বাইরে। আগের দিনে গাজার যেসব শিশু নতুন পোশাক পরে আনন্দ করত, তারা এখন ক্ষুধায়-আতঙ্কে কাতর। ঈদ উপলক্ষে নেই তেমন রান্নার আয়োজন।

ইসরায়েলের হামলা শুরুর আগে গাজার ফিলিস্তিনিরা ঈদের সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উদ্‌যাপন করতেন। তবে এখনকার চিত্র ভিন্ন। বহু গাজাবাসী তাঁদের পরিবারের সদস্যকে হারিয়েছেন। রোববার অনেককে দেখা যায় প্রিয়জনের কবরের পাশে। অনেকে হাজির হন হাসপাতালের মর্গে—শেষবারের মতো কাছের মানুষের মরদেহটি দেখতে।

ইসরায়েলের হামলায় গাজার বাসিন্দা আদেল আল-শায়ের তাঁর পরিবারের ২০ সদস্যকে হারিয়েছেন। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ঈদের নামাজ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘এই ঈদটা কষ্টের। আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলোকে হারিয়েছি। আমাদের সন্তান, আমাদের জীবন, আমাদের ভবিষ্যৎ—সবকিছু... আমরা তো সব হারিয়েছি।’

রোববার ঈদের নামাজ আদায় করেছেন গাজার আরেক বাসিন্দা সায়েদ আল-কুর্দ। তিনি বলেন, ‘এখানে হত্যা করা হচ্ছে। মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। সবাই ক্ষুধার্ত। আমাদের অবরোধ করে রাখা হয়েছে। শিশুদের খুশি করার জন্য শুধু আমরা বাইরে বেরিয়েছি। তবে ঈদের আনন্দের কথা বলতে গেলে—এখানে কোনো ঈদ নেই।’

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের নৃশংসতা শুরুর পর থেকে গাজার ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বিগত ১৭ মাসে উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন ৫০ হাজার ২৭৭ জন। আহত ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ।

এরই মধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এরপর কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন সেখানকার ফিলিস্তিনিরা। কথা ছিল ১ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। তবে এ নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি ইসরায়েল ও হামাস। পরে পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার উৎসবের কারণে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ইসরায়েল।

তবে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে প্রতিদিন নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ঈদের দিনও দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফাসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের তাঁবু ও বাসাবাড়ি। স্থানীয় চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, এদিন অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়ছে।

ঈদের দিন ভোরের আলো ফোটার আগে খান ইউনিসে ইসরায়েলের হামলার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ওমর আল-কাদি। তিনি বলেন, ‘কখন ভোর হবে, ঈদ উদ্‌যাপন শুরু হবে, সেই অপেক্ষায় ছিল শিশুরা। তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিরাপরাধ-শান্তিপ্রিয় বাস্তুচ্যুত মানুষদের তাঁবুতে শত্রুদের যুদ্ধবিমান হামলা চালায়।’

খান ইউনিসের আরেক বাসিন্দা আহমাদ আল-নাজ্জার কাছে এবারের ঈদুল ফিতরকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে ‘মর্মান্তিক’ সময় বলে মনে হয়েছে। তিনি বলেন, খান ইউনিসের শিশুরা ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের জন্য তাঁদের সবচেয়ে সুন্দর পোশাকগুলো খুঁজে বের করছিল। তবে কিন্তু এই বোমাবর্ষণের কারণে অনেকেই সেগুলো পরার সুযোগ পাবে না।’

এদিকে গত ২ মার্চ থেকে গাজার ক্রসিংগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে কোনো ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। ফলে গাজায় যে খাবারের মজুত ছিল তা প্রায় শেষের পথে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তাদের কাছে খাবারের যে মজুত আছে, তা আর মাত্র ১০ দিনের মতো চলতে পারে।

খাদ্যের পাশাপাশি গাজায় পানির সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় মজুত থাকা পানি শেষ হয়ে গেছে। সেখানকার বাসিন্দা ইনশিরাহ হানোউনেহ বলেন, ‘আজ ঈদ। তবে এই তিক্ত জীবনের কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই কষ্টে রয়েছে। এই দিন তাদের জন্য খুশি আনেনি... গত রাত থেকে পানি নেই। পান করার মতো এক ফোটা পানিও পাইনি..যথেষ্ট্ঠ যুদ্ধ হয়েছে। শান্তি চাই।’

রোববার যখন গাজায় ঈদের নামাজ আদায় করা হচ্ছিল, তখনো ভেসে আসছিল কামানের গোলার শব্দ। আকাশে ধেয়ে আসছিল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ড্রোন। খান ইউনিসের ২৮ বছর বয়সী মা নাহলা আবু মাতার বলেন, ‘এক সময় ঈদ ছিল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এবং বেড়াতে যাওয়ার একটি দিন। তবে এখন তা শেষ বিদায়ের এবং নিহতদের দাফন-কাফনের দিনে পরিণত হয়েছে।’