
নিউজিল্যান্ডের মতো সবুজে ঘেরা এক মনোরম স্থান রয়েছে খাগড়াছড়িতে, যার নাম ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’। শহরের শাপলা চত্বর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে সুইস গেইটের পাশে এ এলাকার অবস্থান। দুই পাশে সবুজ ধানের খেত, মাঝখানে সরু পাকা সড়ক, আর দূর থেকে পাহাড়ের মিতালি-সব মিলিয়ে এক অনন্য সৌন্দর্য গড়ে তুলেছে এই স্থান।
পর্যটকরা প্রথম দেখাতেই বিস্মিত হন এ এলাকার ল্যান্ডস্কেপ দেখে। স্থানীয়দের মতে, ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে ধানের জমির মাঝ দিয়ে পাকা সড়ক তৈরি হওয়ার পর থেকেই লোকজন এখানে আসতে শুরু করে। এক পাহাড়ি ব্যক্তি এখানে হাঁটার সময় বলেন, ‘ঠিক যেন নিউজিল্যান্ডের বাতাস’। এরপর থেকেই এলাকাটির নাম হয়ে যায় ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’।
দীর্ঘদিন সড়কটি নাজেহাল থাকায় দর্শনার্থীদের আগ্রহ কমে গিয়েছিল, তবে সম্প্রতি সংস্কারের পর আবারও পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। পাহাড়ের কোলঘেঁষা এই এলাকায় বসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। বর্ষায় এখান থেকে আলুটিলা পাহাড়ের মেঘের ভেলা দেখার সুযোগ মেলে, যা পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে।
এ এলাকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, ধান পাকলে দুই পাশের জমিতে শত শত টিয়া পাখির আনাগোনা দেখা যায়। পাশাপাশি এখানকার পাহাড়ি জনপদের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখা যায়। এসব কারণেই ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’ এখন খাগড়াছড়ির অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।
ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করতে স্থানীয় উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কিছু রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। ব্যাম্বো শুট একো ফুড কোর্টের কর্তৃপক্ষ জানায়, রেস্টুরেন্ট চালু করার পর থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। নতুন রাস্তার কারণে আগের তুলনায় গ্রাহকের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
নিউজিল্যান্ড পাড়ায় যেতে চাইলে প্রথমে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে খাগড়াছড়ি পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে শাপলা চত্বর হয়ে অটোরিকশায় জনপ্রতি ২০ টাকায় সহজেই যাতায়াত করা যায়।
খাগড়াছড়িতে থাকার জন্য পর্যটন মোটেল, হোটেল গাইরিং, অরণ্য বিলাস, মাউন্টেন, শৈল সুবর্ণসহ বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। ৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়, যা পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাগড়াছড়ির এই ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’। স্থানীয়রা আশা করছেন, সরকারি পর্যায়ে পর্যটন সুবিধা বাড়ানো হলে এটি আরও বড় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।