
রাকীব আল হাসান
যে কোনো ধর্ম থেকে কোনো একজন ব্যক্তি যদি ইসলামে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে সর্ব প্রথম কিছু বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে বা ঈমান আনতে হবে। যে মৌলিক বিষয়গুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করে তার অন্যতম হলো- হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-কে সর্বশেষ নবী ও বিশ্বনবী হিসাবে বিশ্বাস করা। কেননা এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেই দিয়েছেন- “হে রসুল! আপনি বলে দিন আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসুল” (সুরা আরাফ ১৫৮)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেন, “মোহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রসুল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সুরা আহযাব- ৪০)। এছাড়াও মহানবী (সা.) বলেন- ‘অন্যসব নবীর মোকাবেলায় আমাকে ছয়টি বিষয় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করা হয়েছে, তার মধ্যে দুটি হলো- আমাকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের রসুলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে এবং আমার দ্বারা নবীদের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।’ (মুসলিম- ৫২৩)। তিনি আরও বলেন, ‘আমি এবং পূর্ববর্তী অন্য নবীদের উদাহরণ হলো, এক লোক একটি ঘর অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরি করলো। কিন্তু ঘরের এক কোণে একটা ইট ফাঁকা রেখে দিলো। লোকজন চতুর্দিকে ঘুরে ঘুরে তার সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হচ্ছে; কিন্তু বলছে, এ ফাঁকা স্থানে একটি ইট বসালে কতোই না সুন্দর হতো! আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’ (বোখারি- ৩২৭১; মুসলিম- ৪২৩৯)। যে বিষয়টি পবিত্র কোর’আন দ্বারা সুস্পষ্টভাবে মীমাংসিত সেই বিষয়ে কারও মনে দ্বিধা থাকলে, সন্দেহ থাকলে সে কখনোই মো’মেন হতে পারবে না; শেষ নবীর উম্মত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। কাজেই খতমে নব্যুয়তে যদি কারও ঈমানই না থাকে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে একটি মৌলিক নীতি মনে রাখতে হবে- কারও ঈমানের ব্যাপারে কেবল তার নিজের মুখের স্বীকৃতিই গ্রহণ করা যাবে, অন্য কেউ বললে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন- মিস্টার কামাল যদি এসে বলে, জামাল আমাদের প্রিয় নবীকে (সা.) শেষ নবী হিসাবে বিশ্বাস করে না, কাজেই মিস্টার জামাল কাফের, তাহলে এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। মিস্টার জামাল যদি নিজে ঘোষণা দেয় যে, আমি মোহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী হিসাবে বিশ্বাস করি না তাহলেই কেবল তার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা যাবে এবং সে মোতাবেক সে ইসলাম থেকে খারিজ হবে।
সম্প্রতি খতমে নব্যুয়তের এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ জাতীয় বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে বহু বছর আগেই। যাদেরকে কেন্দ্র করে এসব বিতর্ক তারা সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর হাজারভাগের একভাগও হবে না। তাদেরকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে বাকি যে দেড়শ কোটি মুসলমান অর্থাৎ আমরা যারা হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে সর্বান্তকরণে আখেরি নবী ও রসুল হিসাবে বিশ্বাস করি, আমরা তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শের উপর কতটা প্রতিষ্ঠিত তা নিয়ে আলোচনা করা অধিক জরুরি নয় কি?
আমি মনে করি, আমাদের প্রিয় নবীকে মহান আল্লাহ কেন পাঠালেন, কেন তিনি এত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, খেয়ে-না খেয়ে, পেটে পাথর বেঁধে উম্মতে মোহাম্মদী নামক জাতিটি তৈরি করলেন তা নিয়ে আলোচনা করা অধিক জরুরি। এই উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানার নামই হলো আকিদা অর্থাৎ কোনো জিনিস বা বিষয় সম্পর্কে সম্যকভাবে জানা (Comprehensive Concept)। আকিদা ভুল হলে ঈমান ভুল আর ঈমান ভুল হলে আমল ভুল - প্রায় সকল আলেম ফকিহ এ ব্যাপারে একমত। রসুলাল্লাহর জীবনাদর্শ সম্পর্কে সঠিক আকিদা পোষণ করতে হলে আমাদেরকে তাঁর নব্যুয়তি জীবনের সূচনা থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে সংগ্রাম তিনি করে গেলেন সেটাকে এক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তাঁর জীবনকে যারা খণ্ড খণ্ড করে দেখবে, তারা তাঁর সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে যেতে পারবে না।
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ অন্তত তিনটি আয়াতে রসুলাল্লাহর আগমনের উদ্দেশ্য বিবৃত করেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহ স্বীয় রসুলকে হেদায়াহ ও সত্যদীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন এই জন্য যে, তিনি যেন একে অন্যান্য সকল দীনের উপর বিজয়ী করেন (সুরা তওবা ২৮, সুরা তওবা ৩৩, সুরা সফ ৯)। হেদায়াহ হচ্ছে সঠিক পথের নির্দেশনা (Orientation)। মানুষ কোনদিকে যাবে কোন সিদ্ধান্ত নিবে এ বিষয়ে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াহ (এঁরফবষরহব) প্রদান করেছেন। এটাই হচ্ছে “ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম” - আমাদেরকে সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও। এটা হলো তওহীদ - লা ইলাহ্ ইল্লাল্লাহ, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম না মানা। এই তওহীদের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে দীনুল হক বা সত্য জীবনব্যবস্থা। মানবজীবন কীভাবে পরিচালিত হবে, তার ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন ইত্যাদি নিয়ে সমগ্র জীবন পরিচালিত করার জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি দীন আল্লাহ দিলেন। যে বিষয়ে তিনি বলেছেন, আমি আজ তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গতা দান করলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসাবে মনোনীত করলাম (সুরা মায়েদা ৩)।
আল্লাহর মনোনীত এই সত্যদীন সমগ্র মানবজাতির জীবনে প্রতিষ্ঠা করাই রসুলাল্লাহর আগমনের উদ্দেশ্য। একটি দীনের ফল তখনই দৃশ্যমান হয় যখন সেটাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। রসুলাল্লাহর কাজের পরিসীমা হলো সমগ্র মানবজাতি, সমগ্র বিশ্ব, তাঁর সময়সীমা কেয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহ বলেন, “হে রসুল! আপনি বলে দিন আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসুল” (সুরা আরাফ ১৫৮)। তাঁর উপাধি আল্লাহ দিয়েছেন, রহমাতাল্লিল আলামিন অর্থাৎ বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত। সেটা কীভাবে? যখন এই সত্যদীন সমগ্র দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা করা যাবে তখনই শান্তি, ন্যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন সবাই উপলব্ধি করবে যে, সত্যিই মহানবী (সা.) সমগ্র সৃষ্টির জন্য শ্রেষ্ঠ রহমত। সেই দীনকে সমগ্র বিশ্বে প্রতিষ্ঠার কোনো চেষ্টাই না করে যতই দরুদ পড়ি, যিকির করি আর সংখ্যার গৌরব প্রদর্শন করি লাভ নেই।
পূর্বের নবী রসুলদের অনেকে এসেছেন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য। বনি ইসরাইল জাতির মধ্যে আগত নবী-রসুলরা কথা বলেছেন তাঁদের জাতির উদ্দেশে। তাঁরা বলেছেন, “হে বনি ইসরাইল!” কিন্তু শেষ রসুল বলেছেন মানবজাতিকে উদ্দেশ করে। তাঁর এই অভিযাত্রা শুরু হয়েছে হেরা গুহা থেকে এবং ঘোষণা হয়েছে সাফা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে। দীন প্রতিষ্ঠার এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি একটি জাতি গঠন করলেন যার নাম আমরা বলতে পারি উম্মতে মোহাম্মদী। আল্লাহ তাঁকে এই দায়িত্ব পালনের জন্য পাঁচদফার একটি কর্মসূচি প্রদান করলেন, তিনি সেই কর্মসূচির আলোকে জাতিটিকে গড়ে তুললেন। এই ৫ দফা কর্মসূচি তিনি তাঁর উম্মাহর উপর অর্পণ করার সময় বলছেনÑ এই কর্মসূচি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, এখন এটা তোমাদের হাতে অর্পণ করে আমি চলে যাচ্ছি। সেগুলো হলো :
(১) (সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে) ঐক্যবদ্ধ হও।
(২) (যিনি নেতা হবেন তার আদেশ) শোন।
(৩) (নেতার ঐ আদেশ) পালন করো।
(৪) হেযরত (অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ) করো।
(৫) (এই দীনুল হককে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করো। এখানে জেহাদ অর্থ: সর্বাত্মক চেষ্টা, প্রচেষ্টা।
যে ব্যক্তি এই ঐক্যবন্ধনী থেকে এক বিঘত পরিমাণও বহির্গত হলো, সে নিশ্চয় তার গলা থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেললো- যদি না সে আবার ফিরে আসে (তওবা করে) এবং যে ব্যক্তি অজ্ঞানতার যুগের দিকে আহ্বান করল, সে নিজেকে মুসলিম বলে বিশ্বাস করলেও, নামায পড়লেও এবং রোজা রাখলেও নিশ্চয়ই সে জাহান্নামের জ্বালানী পাথর হবে [আল হারিস আল আশয়ারী (রা.) থেকে আহমদ, তিরমিযি, বাব উল এমারাত, মেশকাত]।
এই কর্মসূচি মোতাবেক তিনি তাঁর জাতিকে তৈরি করলেন। তিনি জাতিকে এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ করলেন যার উপমা আল্লাহ দিয়েছেন গলিত সীসার তৈরি প্রাচিরের সঙ্গে (সুরা সফ ৪)। তিনি হুকুম দিয়েছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জু (তওহীদ) ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (সুরা ইমরান ১০৩)। আর আল্লাহর রসুল ঐক্য বিনষ্ট করাকে কুফর বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঐক্য নষ্টকারীকে জাতির শত্রু বলে সম্বোধন করলেন। ঐক্য বিনষ্ট হয় এমন কাজ দেখলে তিনি রেগে আগুন হয়ে যেতেন। বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি জাতির ঐক্যবদ্ধতার গুরুত্ব দিয়েছেন সর্বাধিক।
তিনি জাতিকে সর্বদা একজন আমিরের বা নেতার অধীনে থাকা শেখালেন। তারা আমিরের শর্তহীন, প্রশ্নহীন, দ্বিধাহীন আনুগত্য করবে, যেভাবে মালায়েকগণ আল্লাহর আনুগত্য করে থাকে। রসুলাল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের আমির যদি কানকাটা, ক্ষুদ্রমস্তিষ্ক, হাবশি ক্রীতদাসও হয় তবু তার আনুগত্য করবে। আমিরের আদেশ মানেই রসুলের আদেশ, রসুলের আদেশ মানেই আল্লাহর আদেশ। তিনি শেখালেন, জাতি হবে একটা, নেতা হবে একজন, সিদ্ধান্ত হবে একটা। সুতরাং এ জাতির মধ্যে নানা ফেরকা, তরিকা, দল-উপদল সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।
রসুলাল্লাহ (সা.) তাঁর আসহাবদেরকে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম, অসম্ভব কোরবানির মাধ্যমে এমন সমাজ গড়ে তুললেন যে একজন সুন্দরী মেয়ে মানুষ একা, স্বর্ণালঙ্কার পরিহিত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে শত শত মাইল পথ অতিক্রম করতে পারত। তিনি এমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে, সম্ভ্রান্ত ঘরের কোরায়েশ বংশীয় নারীও চুরি করে তার সাজা থেকে মুক্তি পায় নি। যারা তার জন্য সুপারিশ করতে এসেছিল তাদের উদ্দেশে তিনি কঠোর ভাষায় বলেছেন যে, যদি তাঁর মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত তাহলে তাকেও তিনি একই শাস্তি দিতেন। যে সমাজে নারীদের কোনো সম্মান ছিল না, তাদেরকে জীবন্ত কবর দিয়ে দিত সেখানে তিনি নারীদেরকে যুদ্ধ¶েত্রে নিয়ে গেলেন, সমাজের সর্ব অঙ্গনে সম্মানজনক কাজ করার পরিবেশ প্রদান করলেন। মেয়েরা মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে, জুমায়, ঈদে অংশ নিত, তারা হাসপাতাল পরিচালনা করত, বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করত। তিনি সর্ব¶েত্রে মৃত জাতিকে জাগ্রত করে তুললেন। তারা অল্প কিছুদিনের মধ্যে পারস্য রোমান সাম্রাজ্যকে যুদ্ধে পরাজিত করল। জ্ঞানে বিজ্ঞানে সামরিক শক্তিতে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে তারা পৃথিবীর শি¶কের আসনে আসীন হয়ে গেল। মানব ইতিহাসে একটি বিস্ময়কর প্রগতির অধ্যায় রচিত হলো। এই কাজটি করাই ছিল নবীর আগমনের উদ্দেশ্য। তিনি হাতে কলমে পুরো আরব উপদ্বীপে সত্য, শান্তি, ন্যায়, ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধ, রক্তপাত, হানাহানি দূর করে দিলেন। বাকি পৃথিবীতে একই কাজ করার দায়িত্ব দিয়ে গেলেন তাঁর হাতে গড়া জাতিটির উপর। তাঁর কাছ থেকে শি¶া নিয়ে খোলাফায়ে রাশেদিন ও প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী ৬০/৭০ বছর আপ্রাণ সংগ্রাম করে অর্ধেক দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। তখন তওহীদের পতাকা আটলান্টিকের তীর থেকে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত পতপত করে উড়ত। বিশ্বের আর সব জাতি সভয় সম্ভ্রমে মুসলিমদের দিকে চেয়ে থাকত। এই হচ্ছে অতি সং¶েপে মহানবীর জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা।
মো’মেন, মুসলিম, উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের নবী (সা.) এর এই সংগ্রামী জীবনই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। অন্য কোন নবীর আর আমাদের জন্য প্রয়োজন নেই। তিনি এমন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন যে, কেয়ামত পযর্ন্ত সমাজ বিপ্লবের জন্য, পথ পদর্শনের জন্য তার পবিত্র জীবনই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তাঁর মাধ্যমে যে কোর’আন আমরা পেয়েছি তা পরিপূর্ণ জীবনবিধান। কাজেই আমরা ঋদ্ধ, আমরা পূর্ণ। আমাদের আর অন্য কোনো কিছু চিন্তা করার দরকার নেই।
খতমে নবুয়তের প্রসঙ্গ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের আগে এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমরা যারা খতমে নব্যুয়তের উপর বিশ্বাস রাখি, আল কোর’আনকে পূর্ণাঙ্গ ও শেষ কেতাব বলে বিশ্বাস করি, নিজেদেরকে মো’মেন, মুসলিম, উম্মতে মোহাম্মদী বলে বিশ্বাস করি, আমরা আমাদের জাতীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবনে কতটুকু ইসলামকে অনুসরণ করছি, আল্লাহর হুকুমকে মান্য করছি এটা বিবেচনা করা। আমরা আখেরি নবী (সা.) যে দায়িত্ব আমাদের কাঁধে অর্পণ করে চলে গেছেন, অর্থাৎ সর্বাত্মক সংগ্রাম করে শেষ দীনকে বিশ্বময় প্রতিষ্ঠা করা সে দায়িত্ব আমরা কতটুকু পালন করছি? এটা নিয়ে চিন্তা করা আমাদের জন্য মুখ্য। তাই কে তাঁকে আখেরি নবী হিসাবে বিশ্বাস করল, কে করল না সে বিষয় নিয়ে বিতর্কে যাওয়ার পূর্বে আমাদের উচিত হবে, আমরা যারা শেষ নবীর উম্মত তাদের তওহীদের ভিত্তিতে, ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে ধারণ করে তাড়াতাড়ি ঐক্যবদ্ধ হওয়া। পৃথিবীতে শত শত কোটি মানুষ আছে যারা মহানবীকে আল্লাহর নবী বলেই বিশ্বাস করে না, শেষ নবী মানার তো প্রশ্নই আসে না, তাদেরকে নিয়ে কি আমরা মাথা ঘামাই? বরং আমরা যদি তওহীদের ভিত্তিতে ও কোর’আনের হুকুম বিধান মান্য করার অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, নিজেদের মধ্যকার সমস্ত মাজহাব, তরিকা ও ফেরকাগত দ্বন্দ্ব দূর করে একটি শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে পারি, তবে কেউ আর মহানবী শেষ নবী কি নবী না এসব বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করার সাহস পাবে না, এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগও কেউ পাবে না।