Date: April 29, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / স্বাস্থ্য / খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিকে নষ্ট হচ্ছে কিডনি-লিভার - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিকে নষ্ট হচ্ছে কিডনি-লিভার

March 14, 2024 11:33:58 AM   দেশেরপত্র ডেস্ক
খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিকে নষ্ট হচ্ছে কিডনি-লিভার

খাদ্যে বিষাক্ত কেমিক্যালের ব্যবহারে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরী হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল নতুন নয়। এর আগেও দুই বছর ব্যাপী ইত্তেফাকে ‘আমরা কী খাচ্ছি’ নামে ধারাবাহিক রিপোর্ট ছাপা হয়। তখন আলোচিত ম্যাজিষ্ট্রেট রোকন উদ দ্দৌলা অভিযান পরিচালনা করেন।

সেই অভিযানে খাদ্যে ব্যবহারযোগ্য নয় এমন সব কেমিক্যাল পাওয়া গিয়েছিল। এমনকি লাশ সংরক্ষনে রাখার ফরমালিনও পাওয়া গিয়েছিল। এরপর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রশাসনও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। মধ্যে কয়েক বছর পরিস্থিতি একটু ভালো ছিল। এখন আবার ব্যাপকভাবে খাদ্যে বিষাক্ত কেমিক্যালের ব্যবহার হচ্ছে।

খাদ্যে বিষাক্ত কেমিক্যালের ব্যবহারে কী ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী হচ্ছে জানতে চাইলে কিডনী ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বাবরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে, খাদ্যে অনেকে কম দামের কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে। যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই নন ফুড গ্রেড নামে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হঠাৎ কিডনী নষ্ট হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। শিশুরাও কিডনীতে আক্রান্ত হচ্ছে।

এসব হচ্ছে কেমিক্যাল রিয়াকশনের কারণে। অনেকের লিভার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিডনী, লিভার, ক্যান্সার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বেড়েছে। কেমিক্যালের কারণে মায়ের পেট থেকেই মাথা বড় ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে।

গাইনী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় কেমিক্যাল সংমিশ্রনে তৈরী খাদ্যসামগ্রী খাওয়ার ফলে মা এবং শিশু উভয়ই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরনের অনেক রোগী ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা পাচ্ছেন। ফলে ফল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

গতকাল কুমিল্লায় বিএসটিআই ও  র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়েছে। এতে একটি সফট ড্রিংকস পাউডার উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান সীলগালা ও আরও দু'টি প্রতিষ্ঠানকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চৌদ্দগ্রামের বিসিক শিল্প নগরীতে মিজান এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত নোংরা, অস্বাস্থ্যকর এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে সফট ড্রিংকস পাউডার উৎপাদন, মোড়কজাত ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

পরে প্রতিষ্ঠানটিকে সীলগালা করে দেওয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠানে থাকা আনুমানিক সাড়ে তিন লক্ষ টাকার মালামাল জব্দ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে জব্দকৃত মালামাল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের প্যানেল মেয়র সাইফুল ইসলামের জিম্মায় রাখা হয়েছে।

একই এলাকায় মিয়াজী এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি পন্য মোড়কজাত নিবন্ধন সনদ গ্রহন ব্যাতীত চাল পন্য মোড়কজাত ও বাজারজাত করে এবং বিএসটিআই ভেরিফিকেশন সনদ না নিয়েই একটি ট্রাকওয়ে ব্রীজ স্কেল বানিজ্যিক কাজে ব্যাবহার করছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া ওই এলাকার বে ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি পন্য মোড়কজাত নিবন্ধন সনদ না নিয়েই চাল পন্য মোড়কজাত ও বাজারজাত করছে। প্রতিষ্ঠানটি পন্য মোড়কজাত নিবন্ধন সনদ ছাড়া বিস্কুত, ব্রেড, কেক, ফার্মেন্টেড মিল্ক, রসমালাই পন্য উত্পাদন, মোড়কজাত ও বাজারজাত করায় তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রাজধানীতেও এই ধরনের অভিযান চলছে।

আগের অভিযানের সময় রাজশাহীতে দেখা যায়, আমেও ব্যবহার করা হচ্ছে নন ফুড গ্রেড কেমিক্যাল। তখন ব্যবসায়িদের সচেতন করা হয়। কারণ ব্যবসায়িরা তখন জানতেন না কী ধরনের কেকিম্যাল তাদের ব্যবহার করা উচিত।

একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বলেন, খাদ্যে যারা ভেজাল করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ একজন সন্ত্রাসী একজনকে খুন করেন। কিন্তু খাদ্যে যারা ভেজাল দিচ্ছে তারা জাতিকে ধ্বংস করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বাইরে বেশি এসব কেমিক্যালের ব্যবহার হচ্ছে। অধিকাংশ জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

জানতে চাইলে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিষাক্ত কেমিক্যালের কারণে নার্ভ নষ্ঠ হচ্ছে। ব্রেনের ক্ষতি হচ্ছে। এগুলো বুদ্ধিমত্তা কমিয়ে দেয়। যে কেউ বিকালঙ্গ হতে পারে। নিউরোপ্যাথি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। নার্ভ ঠিকমতো কাজ করে না। ড্যামেজ করে দিচ্ছে। মস্তিস্কের ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। অল্প বয়সের বাচ্চাদেরও এটা হচ্ছে। এটা আস্তে আস্তে মারাত্মক ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। এগুলো থেকে বাঁচতে খাদ্যে ভেজাল কমিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত কেমিক্যাল ব্যবহার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এখন আমাদের কাছে যেসব রোগী আসছে, তাদের বেশিরভাগ এই কারণে।’