
আশিকুর রহমান:
গাজীপুরে ব্যবসায়ী টাঙ্গাইলের বাসিন্দা ফিরোজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের চার আসামীকে গ্রেফতারের পর ক্লুলেস এ হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়। গ্রেফতার কৃতরা হলেন, সাভারের হেমায়েতপুরের বাসিন্দা সালাউদ্দিনের ছেলে মহসীন মিয়া (২৫), ইয়াসিন মিয়ার ছেলে আল আমিন মিয়া (৩০), সাভারের হেমায়েতপুরের ফরিদুলের ছেলে সোহাগ ওরফে মেঘলা (২৫) ও ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার মৃত তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম রুবেল (১৮)।
এর আগে গত ২১ রাত দুইটার দিকে আগস্ট কাশিমপুর থানাধীন তেতুইবাড়ী সাকিনস্থ ব্রিটিশ এ্যামেরিকান টোবাকো ফ্যাক্টরির সামনে উত্তর কর্নারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর থেকে কলা ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ভিকটিমের পিঠে, পায়ে ছুরিকাঘাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম ছিল। ফিরোজ মিয়া টাঙ্গাইলের সখিপুর থানাধীন কালিদাস গ্রামের আব্দুল হালিম মিয়ার ছেলে। তিনি নিয়মিত ঢাকাস্ত আড়তে কলা বিক্রি করতেন।
জানা যায়, গত ২০ আগস্ট দুপুরে টাঙ্গাইল জেলাধীন সখিপুর থানাধীন কুতুবপুর বাজার হতে কলা লোড করে তার চালিত মহিন্দ্র পিকআপ যোগে ঢাকায় আসেন এবং ঢাকাস্থ আড়তে কলা আনলোড করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরে এদিন রাতে কাশিমপুর থানাধীন তেতুইবাড়ী সাকিনস্থ ব্রিটিশ এ্যামেরিকান টোবাকো ফ্যাক্টরীর সামনের উত্তর কর্নারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঘটনা ও মামলা রুজ হওয়ার পর জিএমপি উত্তর ডিসি আবু তোরাব মোঃ শামছুর রহমানের দিকনির্দেশনায় এডিসি (অপরাধ) উত্তর মোঃ খায়রুল আলম ও কোনাবাড়ি জোনের এসি দিদারুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে কাশিমপুর থানা পুলিশ তদন্তে নামে। পরে হত্যাকান্ডে সন্দেভাজন আসামী মহসীন মিয়া (২৫) ও রবিউল ইসলাম রুবেল(১৮) কে গ্রেফতার করা হলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার সত্যতা স্বীকার করে এবং ঘটনার লোমহর্ষক বর্ননা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দী প্রদান করে।
গ্রেফতার কৃতদের বর্ণনা অনুযায়ী পুলিশ জানায়, গত ২০ আগস্ট রাতে আসামী মহসীন, রবিউল, আলামিন, মেঘলাগণ ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে রাত অনুমান ০১.৩০ ঘটিকায় শ্রীপুর বাসস্ট্যন্ডে আসে। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শ্রীপুর থেকে চন্দ্রার দিকে তারা যাওয়ার সময় কিছুদুরে ময়লার নিকট যাওয়ার পর ভিকটিমকে পিকআপ গাড়ীটি পরিষ্কার করতে দেখে তারা ভিকটিমের কাছে গিয়ে তাদের সাথে থাকা সুইচ গিয়ার ও চাপাতি ভয় দেখিয়ে ভিকটিমকে গাড়ীতে তুলে। আসামী মহসীন গাড়ীটি চালাতে থাকে এবং রবিউল, আলামিন, মেঘলা ভিকটিমের নিকট হইতে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ভিকটিম বাঁধা দিলে রবিউল তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে পায়ে কোপ মারে এবং আলামিন তার হাতে থাকা সুইচ গিয়ার দিয়ে তার পিঠে স্টেব করে হত্যা করে আসামীরা ছিনতাইকৃত সাত হাজার টাকা নিয়ে পিকআপ গাড়ীসহ লাশটি কাশিমপুর থানাধীন তেতুইবাড়ী সাকিনস্থ ব্রিটিশ এ্যামেরিকান টোবাকো ফ্যাক্টরীর সামনে উত্তর কর্নারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর লাশ ও পিকআপ গাড়ী ফেলে রাস্তা পার হয়ে সাভারের দিকে পালিয়ে যায়। আসামী মহসীনকে গ্রেফতারের সময় ছিনতাই ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকু এবং ছিনতাইকৃত এক হাজার টাকা এবং রবিউল এর নিকট হইতে ছিনতাইকৃত এক হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বর্ননানুযায়ী তাদের সঙ্গীয় পলাতক আসামী আলআমিন ও মেঘলাকে সাভার থানাধীন হেমায়তপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতার কালে আলামিনের নিকট থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়। আল আমিন ও মেঘলা উভয়ই ছিনতাই ও হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
আসামীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।